২০২০ সালে যখন করোনা প্রথম ঢেউ দেখা দেয় জনতা কারফিউ থেকে লকডাউনের ডাক দিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন সামাজিক মেলামেশা এড়িয়ে চলতে। করোনা সংক্রমণ এর হাত থেকে বাঁচতে ঘরেই থাকতে বলছিলেন চিকিৎসক থেকে প্রশাসন। কিন্তু এই করোনার ভয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের এক পরিবার এতটাই ঘরেবন্দি হয়ে ছিলেন, যে শেষটায় তাদের রীতিমত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। এমনকি আর কিছুদিন এইভাবে চললে হতে পারত মৃত্যুও। নেপথ্যে কোভিড ভীতি।
২০২০ সালে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে করোনা সংক্রমন। আর এই সংক্রমনের ভয় এমন ভাবেই মনের মধ্যে গেঁথে গিয়েছিল যে, ১৫ মাস নিজেদের স্বেচ্ছায় ঘরবন্দি করে রাখেন অন্ধ্রপ্রদেশের পূর্ব গোদাবরী জেলার কাদালি গ্রামের একই পরিবারের তিন মহিলা। এক মহিলা, ৫০ বছরের রুথাম্মা তাঁর দুই মেয়ে কান্তামণি (৩২) এবং রানি (৩০) বাড়ি থেকে বের হয়নি দেড় বছর। গত সোমবার আশে পাশের বাসিন্দা এবং পরিচিতদের থেকে খবর পেয়ে পুলিশ এসে ওই তিন মহিলাকে তাঁদের ঘর থেকে উদ্ধার করেছে বলে জানা গিয়েছে। চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাদের ইতিমধ্যেই হাসপাতালেও পাঠানো হয়েছে। তাঁদের দেখেই বোঝা যায় গত দেড় বছর শরীরের যত্ন নেওয়া হয়নি, এমনকী স্নানও হয়নি। তিন জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর হাসপাতলের চিকিৎসকরা জানিয়েছে , দীর্ঘ সময় ঘরের মধ্যে বন্ধ থাকার কারণে তাদের মধ্যে দেখা গেছে একাধিক শারীরিক জটিলতা। হাসপাতাল সুপার প্রভাকর রাও জানিয়েছেন, বাইরে না বেরোনোর কারণে ওই সমস্ত মহিলাদের শরীরে ভিটামিন ডি এবং বি কমপ্লেক্সের ভীষণ পরিমানে অভাব দেখা দিয়েছে। হিমোগ্লোবিনের মাত্রাও কমে দাঁড়িয়েছে অত্যাধিক নিচে। মানসিক ভাবেও সুস্থ নেই তারা। কাদালি গ্রামের প্রধান বলছেন, আর কিছুদিন এভাবে থাকলে রুথাম্মা ও তাঁর দুই মেয়ের মৃত্যু হতে পারত।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক ছেলে, দুই মেয়ে, এবং স্ত্রীকে নিয়ে কাদালি গ্রামে বহু দিন ধরেই বসবাস করছেন বছর পঞ্চাশের জন বেনি। দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই ওই পরিবারের মধ্যে একটা করোনা নিয়ে একটা ভীতি ঢুকে যায়। পাশের বাড়ির এক মহিলা কোভিড-আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে সেই করোনা আতঙ্ক আরো জাঁকিয়ে বিশ্বে তাদের মধ্যে। তার পর থেকেই বেনির স্ত্রী এবং দুই মেয়ে নিজেদের পুরোপুরি ঘরবন্দি করে ফেলেন। ১৫ মাস এই ভাবেই কাটিয়ে দেন তাঁরা। কখনও কখনও বেনি এবং তাঁর ছেলে বাড়ির বাইরে বের হতেন। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ ভারতে শুরু হতেই বেনি এবং তাঁর ছেলেও আর বাইরে বেরোয়নি। বেনির এক পরিচিত বিষয়টি কাদালি গ্রাম প্রধানকে জানান। তখন তিনি খবর দেন পুলিশে। পুলিশ এসে তিন মহিলাকে ঘর থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।