আমাদের দেশে কন্যা সন্তানকে আজও অনেকটা নেকনজরে দেখা হয়। প্রথম সন্তান মেয়ে হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অধিকাংশ পরিবারেই মাকে শুনতে হয় অনেক গঞ্জনা। যে কারণে কন্যাভ্রূণ হত্যা এখনও আমাদের দেশে এক অভিশাপ হিসেবে রয়ে গিয়েছে।
সম্প্রতি এনসিআরবি বা ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর একটি সমীক্ষা বলছে, দেশের কয়েকটি রাজ্যে উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে কন্যাভ্রূণ হত্যা। যার ফলে ওই সমস্ত রাজ্যগুলিতে পুরুষের তুলনায় নারীর অনুপাত অনেকটাই কম। ওই রাজ্যগুলির মধ্যে হরিয়ানা অন্যতম। কিন্তু সেই হরিয়ানাতেই এক ব্যতিক্রমী গ্রামের সন্ধান মিলল।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মাঝেই এই এক উদাহরণ তৈরি করল হরিয়ানার হিসার জেলার মায়ার গ্রাম। এই গ্রামে প্রায় হাজার দেড়েক পরিবারের বাস। এই গ্রামের প্রতিটি বাড়ির একটি করে আলাদা নাম বা পরিচয় রয়েছে। বাড়ির নাম ঠিক করা হয় মেয়ে বা বউদের নামে। মেয়ে বা বউদের নামের এক ডাকে চেনা যায় একটি পরিবারকে।
এই গ্রামে এক সময়ে সরপঞ্চ বা পঞ্চায়েত প্রধান ছিলেন সুনীল জগলান। মেয়েদের প্রতি সম্মান জানাতে ২০১৫ সালে তিনি চালু করেছিলেন ‘লাডো স্বাভিমান’ উৎসব। ভোজপুরি ভাষায় ‘লাডো’ কথার অর্থ মেয়ে। মেয়েরা যে সমাজের গর্ব সেই কথা তুলে ধরতেই এই উৎসবের সূচনা করেছিলেন জগলান। মায়ার গ্রামে প্রতিটি বাড়ির নামকরণ করা হয়ে থাকে সেই বাড়ির মেয়ে বা বউয়ের নামে। এই গ্রামের গ্রামবাসীরা এ ব্যাপারে যথেষ্ট খুশি এবং গর্বিত বলে জানিয়েছেন।
জগলান জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত তিনি মায়ার-সহ আরও বেশ কয়েকটি গ্রামের ১৭ হাজার বাড়িতে মেয়েদের নামে নেমপ্লেট তৈরি করতে পেরেছেন। আগামী দিনে আরও অনেক গ্রামে তিনি এই কাজ করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
গগনদীপ সিং নামের মায়ার গ্রামের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, মেয়েরাই বাড়ির প্রকৃত লক্ষ্মী। বাড়ির উন্নয়নের পিছনে মেয়েদের অবদান সবচেয়ে বেশি। মেয়েদের অবদানকে স্বীকৃতি দিতেই তাঁরা বাড়ির নাম মেয়েদের নামে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তাঁদের এই সিদ্ধান্ত প্রথম দিকে হয়তো অনেকেরই পছন্দ হয়নি। কিন্তু পরবর্তী ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত সকলের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।