হীরা জিশান। বয়স তা প্রায় বিয়াল্লিশ ছুঁই ছুঁই। শুক্রবার এলেই তিনি নববধূ সাজে সজ্জিত হন। কিন্তু সপ্তাহের ওই এক দিনই। পাকিস্তানের বাসিন্দা এইমহিলা চার সন্তানের জননী। বিবাহিতও। তার এই অদ্ভুত কিছুটা হতবাক তার পাড়া পড়শিরাও। সাজতে গুঁজতে কম বেশি সব মহিলাই ভালোবাসেন। কিন্তু একজন বিবাহিত মহিলা সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার নববধূ সাজার এমন সখ জাগে বলে শোনা গিয়েছে মনে হয় না।
পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশে বাড়ি এই মহিলার। প্রতি শুক্রবারই তিনি লেহেঙ্গা ওড়না দিয়ে নববধূর বেশে সাজেন। তার মহিল্লাতেও তাঁর এই বউ সাজার আজব শখ নিয়ে নানা রকম আলোচনাও চলে। কিন্তু কেন এই আজব ধরনের শখ হীরা জিশান নামক সেই মহিলার? এর পিছনে রয়েছে এক দুঃখের কাহিনিও।
ঘটনা আজ থেকে ১৬ বছর আগে ওই মহিলার মা বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু নিজের মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর চিন্তার অন্ত ছিল না। শারীরিক অবস্থার ক্রমশঃই খারাপ হওয়ায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। হীরার মায়ের ভীষণ ভাবেই ইচ্ছা ছিল মারা যাওয়ার আগে মেয়েকে নববধূর সাজে দেখে যাবেন। অর্থাৎ তাকে বিয়ে দেওয়ার। হাসপাতালেরই এক কর্মী অসুস্থ থাকার সময়ে হীরার মাকে রক্ত দিয়েছিলেন। মায়ের শেষ ইচ্ছা অনুসারে সেই কর্মীকেই বিয়ে করেন হীরা। তিনি বলেন, “হাসপাতালের মধ্যে কোনো নববধূর সাজে নয় সাধারণ জামাকাপড়েই কলমা পরে বিয়ে হয়েছিল। এবং এক কাপড়েই। আর চার-পাঁচটা বিয়ের মতো কোনো কিছুই হয়নি। অসুস্থ মায়ের সামনে কোনোরকমে চার হাত এক হয়” বিয়ের কয়েক দিনের মধ্যেই হীরার মা মারা যান। মাকে হারিয়ে সেই সময় একেবারে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন হীরা।
এখানেই তার শোকের শেষ নয়। তার জন্য আরও যেন অপেক্ষা করছিল আরো মারাত্মক পরিস্থিতি যেন অপেক্ষা করছিল। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই নিজের ছয় সন্তানের মধ্যে দুই সন্তানকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েন। মানসিক অবসাদের ভুগতে থাকেন তিনি। এই মানসিক অবসাদ থেকে নিজেকে বার করে আনার জন্যই সপ্তাহের একটা দিন শুক্রবার নববধূর বেশে নিজেকে সাজান। মনকে একটু ভালো রাখতে। হীরার প্রবাসী স্বামী বর্তমানে লন্ডনে থাকেন। তিনিই জানান, “একাকিত্ব আর অবসাদ থেকে নিজেকে বার করে আনতে, মুক্ত করতে, আর কিছুটা অপূর্ণতা কাটাতে এই ভাবে সাজেন তিনি।” ১৬ বছর ধরে তাই হীরা এ ভাবেই সেজে আসছেন প্রতি সপ্তাহে।