তার স্ত্রীয়ের করোনা আক্রান্ত হওয়ার কথা জানান বাড়ির মালিককে। তার মৃত্যু ঘটেছে হাসপাতালে। ঠিক এই কথা বলেই ওই অভিযুক্ত বাড়ি ছেড়ে দেন। এরপর দীর্ঘ এগারো মাস কেটে যায় এই ঘটনার, তারপর একদিন ওই অভিযুক্ত স্বামীকে গ্রেফতার করে পুলিশ এবং জেরা করতেই জানতে পারে তার স্ত্রীকে নৃশংস ভাবে খুনের কাহিনী। তার থেকে এও জানতে পারে যে তার স্ত্রী পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছে! এই স্ত্রীয়ের পরকীয়ার সন্দেহেই তাকে এক ধারালো বঁটি দিয়ে কুপিয়ে ২১ টুকরো করে খুনের পর দেহ ফ্রিজে লুকিয়ে রাখল স্বামী। এমনকি খুব সন্তর্পনে সুযোগ বুঝে তার স্ত্রীয়ের মৃতদেহর এক এক টুকরো এক এক দিনে পাশের পুকুরে ফেলতো। মোট এই কাজ ৬দিন ধরে টানা করে গেছে ওই অভিযুক্ত। তবে তার খন্ড করা মাথাটা প্লাস্টিকে জড়িয়ে নিয়েছিলেন। দেহ সম্পূর্ণরূপে ফেলে দিলে। এই ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেছে।
সূত্র থেকে জানা গেছে যে এই ঘটনায় অভিযুক্ত রাসেল জীবিকার কারণে প্রথমে ঢাকা ও তারপর নারায়ণ গঞ্জে চলে আসে। রাসেল ফতুল্লার বিসিকে রনি নিট কম্পোজিটে এবং তানজিনা চাকরি করতেন পাশের ফারিহা গার্মেন্টে। এই সময় থেকেই দুজনের মধ্যে মেলামেশা বারতে থাকে, যা গড়ায় প্রেম অবধি। এরপর বিয়ের প্রস্তাব দেয় রাসেল তানজিনাকে। কিন্তু বিয়েতে অরাজি হয় তানজিনা। তাই পরে ২০১৯ সালে রাসেল একজনকে বিয়ে করে মোনালিসা নামে। কিন্তু তানজিনা দ্রুত নারায়ণগঞ্জে চলে আসেন গ্রামের বাড়িতে রাসেলের এই বিয়ের খবর পেয়ে। সে সময় আবারো এই তানজিনা আর রাসেলের মধ্যে যোগাযোগ শুরু হয়।
এদিকে পরে পরিবারের অগোচরে তারা বিয়ে করে। স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস শুরু করে আদর্শনগর এলাকায় মহম্মদ নোয়াবের বাড়ির তৃতীয় তলায়। সেখানকার পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম বলেন, জেরায় মুখ খুলেছিলো রাসেল আর তার দাবি যে তানজিনা একাধিক পুরুষের সঙ্গে কথা বলত। তাদের মধ্যে অশান্তিও হতো এই নিয়ে। ঘটনার দিনও রাসেল তানজিনাকে অনেকক্ষণ ধরে কথা বলতে দেখেছে। বেধড়ক মারধর করে তানজিনাকে। অশান্তির মাঝেই ঘরে থাকা বঁটি দিয়ে রাসেল তানজিনার গলায় আঘাত করে। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সে। জ্ঞান হারায় সাথে সাথেই । পরে রাসেল ওই বটি দিয়েই দেহ থেকে তানজিনার মাথা আলাদা করে। মোট ১৬টি টুকরো করা হয় দু’টি হাত এবং পা কেটে। ৩-৪ টুকরো করা হয় ধড় থেকে কোমর পর্যন্ত। ছাদ থেকে পাশের ডোবায় প্রতি রাতে একটি করে টুকরো ফেলে রাসেল।
সম্পূর্ণরূপে ওই দেহাবশেষ পাশের ডোবায় ফেলার পর বাসনপত্র, খুনে ব্যবহৃত বঁটি, তোশক ও বালিশ নিয়ে রাসেল সোনারগাঁয়ের দাউদপুরের একটি মেসে থাকতে শুরু করে। মোট তিনদিন ছিল সে সেখানে। প্রায় ১০ হাজার টাকা আদর্শনগরের বাড়ির ভাড়া না মিটিয়েই তা ছেড়ে চলে যায় রাসেল। পরে রাসেলকে ফোন করে বাড়ির মালিক নোয়াব। বকেয় ভাড়া নিতে বলে রাসেল ফ্রিজ বিক্রি করে। বাড়িমালিকও ফ্রিজটি ১৩ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয় এক ভাড়াটিয়ার কাছে। বাড়িমালিক রাসেলের কাছে বাকি ৩ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন। এদিকে, তার ভাগ্নে পলাশ ফতুল্লা মডেল থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন তানজিনার কোনও খোঁজ না পেয়ে। পুলিশের তরফ থেকে শুরু হয় তদন্ত। পুলিশ রাসেলের সাথে যোগাযোগ করে । সে আসবাবপত্র সোনারগাঁয়ের মেসে রেখেই সাভারে প্রথম স্ত্রী মোনালিসার বড় বোন আশার কাছে চলে যায়। এরপর থাকতে শুরু ক সেখানেইরে। তবে সম্প্রতি রংপুরে গ্রামের বাড়ি গেলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
পিবিআই সূত্র আরও জানায়, রাসেল ২৫টি মোবাইল ফোন এবং ১৫টি সিম বদল করে গ্রেপ্তারি এড়াতে। সেখানকার পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম জানান যে রাসেলকে প্রাথমিক জেরার শুরুতেই সে স্বীকার করে নেয় যে সে তানজিনাকে হত্যা করেছে। দেওভোগ আদর্শনগর এলাকার একটি ডোবা থেকে ১৯টি হাড় উদ্ধার করা হয় রাসেলকে গ্রেপ্তারির পর। তানজিনার কিনা উদ্ধার হওয়া হাড়গুলি নিশ্চিত হতে ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছেন পিবিআই নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম।