বেশিরভাগ মেয়ের বিয়ের পর থেকে তার শ্বশুর বাড়িই হয়ে যায় সবকিছু। মেয়েদের আসল ঘর। আর শশুর শাশুড়ি জায়গা নেয় তার বাবা মার।কিন্তু এমনটা খুব কম ক্ষেত্রে হয় যে নতুন এই পরিবেশে মানিয়ে নেওয়া কোনো বউয়ের জন্যে ভীষণ সহজ হয়। এমনটা মাঝে মাঝেই শোনা যায় যে বহু পরিবারে ছেলের বউদের ওপর নানা মানসিক অত্যাচার করা হয়ে থাকে।এমনকি অনেক ক্ষেত্রে হয় শারীরিক অত্যাচারও। বহু সময় তো এই অত্যাচারের কারণে অনেক মেয়েও মৃত্যুর মুখেও ঢলে পড়তে হয়েছে। কিন্তু এর উল্টোটাও হয়। আবার কিছু কিছু পরিবার এমনও আছে যারা বৌমাকে নিজের বাড়ির মেয়ের মতনই ভালোবাসা দিয়ে থাকেন। তবে প্রতিবারই যে শ্বশুর-শাশুড়িরই সব দোষ থাকে তা নয়।
সব সময় অবশ্য শ্বশুর শ্বাশুড়িই যে খারাপ হয় তাই নয় অনেক সময় বউমারাও শ্বশুর-শাশুড়ির ওপর অনেক অত্যাচার করে থাকে। আসলে শাশুড়ি বৌমার সম্পর্ক বেশ জটিল। একটা সংসারের দায়িত্বভার নিয়ে নতুন আর পুরনো জেনারেশনের ভেতরে মতের অমিল আসতেই পারে। তাই কখনো কখনো ঠোকাঠুকি তো লাগা স্বাভাবিক।
সমাজের শাশুড়ি বৌমার সম্পর্কের যখন এমন হাল সেই সময় যদি শোনেন এমন এক পরিবারও আছে যেখানে পরিবারের বৌমারা শাশুড়িকে দেবতা জ্ঞানে পুজো করে! শুনলে কিছুটা থমকে দাড়াবেন অবশ্যই। কিন্তু হ্যাঁ ব্যাতিক্রমী হলেও এই কাহিনী সত্যি। ঝাড়খণ্ড নিবাসী এই পরিবারে গীতা দেবী ছিলেন সব কিছুর কর্তৃ। তার তিন ছেলের তিন বৌমা এবং নিজের আট জা নিয়ে সংসার। সবার মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ গীতা দেবী। তার বৌমা ও জায়েরা তাকে প্রচণ্ড ভালোই যে বাসেন তাই নয়, সন্মানও করেন ভীষণভাবে। তিনি বরাবরই নিজের বউমা থেকে জা প্রত্যেককে সমানভাবে ভালোবেসে আর স্নেহ করেছে। কখনও কারো জীবনে কোনো কাজে বাধা দেননি। প্রত্যেক বৌমাই তাই বেশ উচ্চশিক্ষিত।
তারা শুধুমাত্র বাড়ির চৌহুদ্দিতেই সীমাবদ্ধ নন। নিজেদের স্বামীদেরকে তারা ব্যবসার কাজে বেশ সহযোগিতা করেন এবং পারিবারিক ব্যাবসায় অংশগ্রহন ও করেন। এই সব কিছুর পেছনেই ছিল গীতা দেবীর উৎসাহ। তিনি তার বৌমা ও জায়েদের প্রতিটি কাজে ভীষণ উৎসাহ দিয়েছেন, পাশেও সরিয়েছেন। এই কারণে এই ১১ জনের কাছেই গীতা দেবি ভগবান তুল্য মানুষ। একটা চলতি প্রবাদ আছে যে পৃথিবীতে যারা ভালো তাদেরই হয়ত অকালে চলে যেতে হয়। তাই এমনই ভাবেই গীতা দেবীও চলে গেছেন না ফেরার দেশে। এমন সুখ ও সমৃদ্ধিতে ভরা সংসার ছেড়ে ২০১০ সালে তিনি পরলোকগমন করেন। তার মারা যাওয়ার পরে তার বৌমা ও জায়েরা ভীষণ ভাবেই ভেঙে পড়েন। কিন্তু তারা সিদ্ধান্ত নেয় গীতা দেবীকে উপযুক্ত সন্মান প্রদর্শনের। তারপরেই তারা গীতা দেবীর একটি আবক্ষ মূর্তি বানায়।
যে মূর্তি বর্তমানে তাদের বাড়ির মন্দিরেই অধিষ্ঠিত আছে। প্রতিদিনই তাকে ভগবান জ্ঞানে পুজো করেন তারা। এছাড়াও বছরে একবার মূর্তিটির সামনে ভজন কীর্তন করা হয়ে থাকে। গীতা দেবীর এই মহৎ কার্য সফল হয়েছে। তার মারা যাওয়ার পরও তার পরিবার আজও ভেঙ্গে আলাদা হয়ে যায় নি। সবাই একত্রে মিলেমিশে আছেন এবং একই রান্নাঘরে সকলের খাবার এক সাথে তৈরি হয়। পরিবারের বাইরে তাদের বসত গ্রামেও গীতা দেবীর পরিবারকে খুব সম্মান করা হয়। বর্তমান সময়ে এই পরিবার সত্যিই এক অন্য চিত্র তুলে ধরে।