ভূতে বিশ্বাস করুক আর না করুক, ভূতের সিনেমা দেখতে ভালবাসেনা এমন সিনেমা প্রেমী নেই ? গা-ছমছমে ভূতের সিনেমার দেখতে বসে যে শিহরণ জাগে তার চেয়েও বেশি রোমহর্ষক কী? যদি আদ্যোপান্ত ভূতের সিনেমাটা বাস্তবেও ভুতুড়ে হয়!
জেনে নিন এমনই একটি সিনেমার কথা। ১৯৭৬-এ মুক্তি পায় মার্কিন-ব্রিটিশ যৌথ প্রযোজনায় মুক্তি পায় ভূতের ছবি ‘দি ওমেন’। সিনেমা জগতের ইতিহাসে কিছু ছবি পেয়েছে ‘অভিশপ্ত ছবি ‘ হিসাবে নাম করেছে। আর সেই সব অভিশপ্ত ছবির মধ্যে প্রথম স্থান পেয়েছে ‘দ্য ওমেন’। গ্রেগরি পেক, লি রেমিক, ডেভিড ওয়ার্নার অভিনীত এই ভয়ের সিনেমাটি দেখতে বসলে অজান্তেই কখন যেন আতঙ্ক গ্রাস করে দর্শককে। এক স্বামী, স্ত্রী আর তাদের এক বাচ্চা ছেলেকে নিয়ে এক সাজানো সংসার কীভাবে তছনছ হয়ে যায় অদ্ভুত অশরীরি প্রকোপে, তা-ই ছিল এই ছবির গল্প। একটা পর্যায়ে গিয়ে দম্পতি বুঝতে পাতে, তাদের শিশুপুত্রটি আসলে শয়তানের প্রতিরূপ। কিন্তু এই ছবিতে যেন সত্যি সত্যিই পড়েছিল শয়তানের ছায়া।
১৯৭৫ সাল। ‘দ্য ওমেন’ ছবির কেবল আইডিয়াটুকুরই বব মাঙ্গার নামের এক বিজ্ঞাপন জগতের কর্মরত ব্যাক্তির মাথাতে আসে। ছবির প্রযোজক হার্ভে বার্নহার্ডকে ছবিটির প্রসঙ্গে আলোচনার পরও বব তাঁকে সতর্ক করেন। একটু দ্বিধা বোধের মধ্যে জানান, এই ধরনের বিষয় নিয়ে ছবি না তৈরি করলেও হয়। কিন্তু কেন?
ববের বিশ্বাস ছিল শয়তানের আসল অস্ত্রই হল অদৃশ্য হয়ে থাকা। আর প্রযোজক কিনা ছবির মাধ্যমে দর্শকদের কাছে শয়তানকে সিনেমায় দেখাবে। শয়তান কিন্তু এটা হতে দেবে না।” বার্নার্ডের একবার স্মৃতচারণা করতে গিয়ে বলেন শয়তান চায়নি ছবিটা আদৌ হোক।”
১৯৭৫ সালের জুন মাসে এই সিনেমা নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার সময় হঠাৎই প্রধান অভিনেতা গ্রেগরি পেকের ছেলে নিজেকে গুলি করে বসল! এরপর সেপ্টেম্বর মাসে গ্রেগরি পেক যে লন্ডনগামী বিমানের যাত্রী ছিলেন, তাতে বজ্রপাত হয়! ছবির প্রযোজক মেক নিউফেল্ড ও বার্নার্ড এর বিমানেও বাজ পড়ে। কোনোমতে তারা রক্ষা পান ঠিকই। কিন্তু তখন থেকেই শয়তানের ভয় তাদের ভয়ভীত করেছিল। বার্নার্ড গলায় ঝুলিয়ে রাখতেন একটি ক্রস। কারণ ততদিনে তাঁর বিশ্বাস হয়ে গিয়েছে, শয়তান তাদের উপর প্রভাব ফেলছে।
হল্যান্ডে ছবির ডিজাইনার জন রিচার্ডসনের গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। রিচার্ডসনের সাথে গাড়িতে থাকা লিজ মুর মারা যান। লিজের শরীরের আঘাতগুলি দেখে ভয়ভীত হন জন। দি ওমেন ছবির এক দৃশ্যে মৃত এক ব্যক্তির আঘাতের যে নকশা বানিয়েছিলেন তিনি, হুবহু অবিকল আঘাতগুলিই গাড়িতে থাকা তার সঙ্গিনীর দেহে। শুধু তাই নয়। দুর্ঘটনার স্থানে থাকা মাইলফলকের গায়ে লেখা ছিল ‘ওমেন, (হল্যান্ডের একটি শহর) ৬৬.৬ কিমি দূরে।’ অতিপ্রাকৃত বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা মানুষ জানেন, খিষ্ট্রানদের কাছে ৬৬৬ হল শয়তানের সংখ্যা। পুরো বিষয়টি আগাগোড়া ভাবলে কোনও হাড়হীম ছবির গল্প বলেই যেন মনে হয়।
যদিও বেশ কিছু মানুষ দাবি, এই সব ঘটনার যে খবর ছড়িয়েছে তার অন্তরালে রয়েছে নিপুণ প্রচারকৌশল। হরর মুভির সঙ্গে জড়িয়ে দেওয়া যায় এমন সব গল্প তাহলে প্রচার হয়। তাহলে কি ‘দ্য ওমেন’কে ঘিরেও রয়েছে এমন কোনো কৌশল? প্রশ্ন উঠালেও এই সিনেমা জড়িয়ে এত কাহিনী রয়েছে যে এখন পর্যন্ত বিশ্বের সকল সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে কুখ্যাত অভিশপ্ত সিনেমা হিসেবে দ্যা ওমেন সিনেমাটি নাম করে নিয়েছে।