সি-হর্স বর্ণিল হয় ভালোবাসার সময়। প্রেম নিবেদনের সময় রং বদলায় উভয়েই সে নারী কিংবা পুরুষ। সি-হর্সের আরও রহস্য জীবনচর্যায় রয়েছে । স্ত্রী নয়,গর্ভধারণ করে পুরুষই সি-হর্সদের ক্ষেত্রে ।
সমুদ্রের উপরিভাগের অনেক নিচে মূলত অগভীর সমুদ্রে সি-হর্স এর বাসস্থান। নাম সি-হর্স তাতে আর কী হবে,এরা কিন্তু আসলে মাছ। ফুলকা দিয়ে শ্বাস নেয় । মুখটা অনেকটা ঘোড়ার মতো বলে এদের সি হর্স নাম। সমুদ্রের ঢেউ পরতে পরতে যেমন রহস্য লুকিয়ে থাকে , তেমনই নানান বিপ্রতীপ ঘটনা সি-হর্সের জীবনেও রয়েছে ।
একটা বিরাট এলাকা সি-হর্সের নারীরা দখল করে রাখে। যদিও পুরুষদের বেঁচে থাকার পরিসর নিতান্তই অল্প তার তুলনায় । এই স্ত্রী সি-হর্সই পুরুষের কাছে যেচে গিয়ে প্রেম নিবেদন করে । মানুষের মতো ভালোবাসার বন্ধন সুদৃ সি হর্সেরও ঢ়। একবার যার প্রেমে পড়ে একটি স্ত্রী সি-হর্স , জীবনভর তাকেই ভালোবেসে যায়। মানুষ যেমন সেজেগুজে যায় তার মনের মানুষের কাছে যাওয়ার সময় , তেমনি বিভিন্ন রং ধারণ করে স্ত্রী সি হর্সও প্রেম নিবেদন করতে গিয়ে । সঙ্গিনী পছন্দ হলে শুধুই মন নয়, পুরুষ সি-হর্সও দেহের রং বদলায় ।
মিলনের কাল পিরিতির রীতি মেনে আসে। মিলন যাতে মধুর হয়, আরও একপ্রস্ত চলে ভালোবাসাবাসি তার জন্য । শেষমেশ দুই শরীর এক হয় । সি হর্সের দৃঢ় প্রকৃতির লেজ । তাই সি-হর্স থাকে লেজে ভর দিয়ে এই সময়টা ।
গর্ভধারণের পালা আসে ভালোবাসাবাসির পর্ব পরিসমাপ্তি ঘটলে । জীবজগতের সর্বত্র স্ত্রী প্রাণী গর্ভধারণ করে । কেবল সি-হর্স ব্যতিক্রম । সি-হর্সের জগতে গর্ভধারণ করে পুরুষ।
সেও এক অদ্ভুত প্রক্রিয়া। স্ত্রী সি-হর্সের শরীর যখন ডিম্বানুতে ভরপুর হয়ে যায় তখন আবারও আসে তার প্রিয়তমের কাছে সে । সেখানে সে ঢেলে দেয় ডিম্বানু পুরুষ সি-হর্সের পেটে থাকা থলিতে । পেট বড় হতে থাকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুরুষ সি-হর্সের। সঙ্গী যেহেতু ভালবাসার বীজ শরীরে ধারণ করেছে , তাই নিজের কাঁধে তুলে নেয় স্ত্রী-সি হর্স তাকে খাওয়ানোর দায়িত্ব । এদের খাদ্য ছোট ছোট চিংড়ি জাতীয় প্রাণীই । সেই খাবার স্ত্রী সি-হর্স জোগাড় করে সঙ্গীর মুখে তুলে দেয় । গর্ভধারণের সময় শেষে পুরুষ সি-হর্স নির্দিষ্ট সময়ে সন্তান প্রসব করে ।
চোখের দৃষ্টিশক্তির ক্ষমতাও অসাধারণ সি-হর্সের । এরা এক সঙ্গে সামনে এবং পিছনে দেখতে পায় । তবে তাতে খুব একটা লাভ হয় না। তার কারণ পরিচয়ে এরা মাছ হলেও, চলাফেরা করতে পারে না মাছের মতো দ্রুত। তাই বিপদ ওত পেতে থাকলেও, সি-হর্সের কিছুই করার থাকে না । এই বিপত্তি শত্রুর সঙ্গে এঁটে উঠতে না পারাতেই । সি হর্সকে অসময়ে চলে যেতে হয় । তখন হয়তো তার ভালো লাগার সঙ্গিনীর জন্য কোনও পুরুষ সি-হর্স কাদে ।