ইতালিতে রয়েছে এমন একটি দ্বীপ রয়েছে যেটা আইল্যান্ড অফ ডেড (Island of Death) অর্থাৎ মৃতের দ্বীপ বলে অভিহিত করা হয়। এই দ্বীপটির সম্পর্কে রয়েছে এক প্রবাদ, বলা হয় যে একবার এই দ্বীপে যায় সে আর জীবিত অবস্থায় ফিরে আসে না।
ইতালির ভেনিস আর লিডো শহর দুটির দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত একটি দ্বীপ যার নাম পোভেগ্লিয়া (Poveglia)। আর দশটি সাধারণ ইতালির দ্বীপের মতো এই দ্বীপটিতে সব সময় দেখা যায় না পর্যটকদের কোলাহল, সমুদ্রের ধারে ঘুরে বেড়ানো, সুখী কাপলদের হাসিমাখা মুখ। না এই দ্বীপটিতে এর কোনোটিরই দেখা পাওয়া যাবে না, উল্টে এখানে বরং ভৌতিক বা গা ছমছমে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে আসা কিছু অভিযাত্রীর দেখা মেলে রাতের অতিথি হিসাবে। যদিও প্রশাসনের নির্দেশে এই দ্বীপে যাওয়া মানা তাও অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় পাগল হয়ে দূরদূরান্ত থেকে এখানে তারা এসে পৌঁছয়। লোকমুখে পরিচিত এই আইল্যান্ড অফ ডেথ এর আসল নাম ‘পোভেগ্লিয়া’।
কিন্তু এই দ্বীপকে কেন বলা হয় মৃতের দ্বীপ? আসলে এর পিছনে রয়েছে একটি ভয়াবহ কাহিনী। জানা যায় বেশ কয়েকশো বছর আগে যখন ইউরোপে ভয়াবহ প্লেগ ছড়িয়ে পড়েছিল এই দ্বীপে দেড় লক্ষ প্লেগ রোগীকে নির্বাসন দেওয়া হয় এবং জনশ্রুতি যে তাদের পুড়িয়ে মারা হয়। সে সময় ইউরোপের প্রতি তিন জন অধিবাসীর মধ্যে একজন মারণ প্লেগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন, এতটাই মারাত্মক ছিল সেই সময়ের ইউরোপের মহামারীর অবস্থা। তারপর থেকেই এই দ্বীপ কুখ্যাত। ইতালির উত্তরে অবস্থিত ভিনিস্বাসী উপহ্রদের দ্বীপে প্রবেশ নিষিদ্ধ। সরকার এই দ্বীপে যাওয়ার ব্যাপারে জনগণের ওপর নিষেধাজ্ঞা রেখেছে। এমনকি এই দ্বীপের আশেপাশে জেলেদের মাছ ধরতে যাওয়াও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ, জেলেরা মাছ ধরার জন্যে জাল ফেললে সেই জালে অনেক সময় মানুষের হাড়গোড় উঠে আসে। কারণ হিসেবে জানা যায়, প্লেগের রোগীদের এখানে আনা হতো মেরে ফেলার জন্য। ফলে আজও দ্বীপের আশেপাশে ছড়িয়ে আছে হাড়গোড়।
এরপরে ১৯২২ সালে এখানে তৈরী করা হয় একটি মানসিক হাসপাতাল। কিন্তু কয়েক বছর পর এটাকে বন্ধ করতে বাধ্য হয় হাসপাতাল আধিকারিকরা। হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়ার কারণ ছিল ডাক্তার এবং নার্সরা অস্বাভাবিক জিনিস দেখতে পাওয়া। তারা এই হাসপাতালে ভর্তি মানসিক রোগীরা পুড়ে মারা যাওয়া প্লেগ রোগীদের আত্মা দেখতে পেতেন। অবশ্য বলা হয় যে এই মানসিক হাসপাতালেও রোগীদের উপরে চালানো হত অত্যাচারও।
হাসপাতাল বন্ধের হয়ে যাওয়ার বেশ কিছু বছর পর পর্যন্ত দ্বীপটি নির্জন অবস্থায় পড়ে থাকে। এরপর ১৯৬০ সালে ইতালি সরকার একটি বেসরকারি মালিকের কাছে বিক্রি করে দেয় এই দ্বীপকে। কিন্তু সেই ব্যাক্তি তার পরিবারকে নিয়ে এখানে এলে সেখানে তার পুত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু হও। আতঙ্কিত হয়ে কিছুদিন পর তারাও এই দ্বীপ ছেড়ে চলে যান। তারপর আবারও একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে এই দ্বীপে। তারপর থেকেই এই ধরনের ঘটনা এড়িয়ে চলতে এই দ্বীপে যাওয়ার উপর জারি হয় নিষেধাজ্ঞা। এই পাণ্ডব বর্জিত দ্বীপে খুব একটা কেউ পা দেয়না।