সন্তানকে নিজের সব টুকু দিয়ে বড় করেন মা বাবা। কিন্তু কিছু সন্তানের তাদের বৃদ্ধ পিতা মাতার উপর নির্যাতনের কাহিনী শুনলে স্তম্ভিত হয়ে যেতে হয়। ভাবতে অবাক লাগে যে মানুষ এত নৃশংস হতে পারে। এমনই একটি মর্মান্তিক ঘটনা সামনে এসেছে তামিলনাড়ুর থাঞ্জাভুর থেকে। দুই ছেলের দায়িত্বে আছেন তাদের অশতিপর বৃদ্ধা মা। কিন্তু সেই ৭২ বছর বয়সী মহিলাকে তার দুই ছেলে গত দশ বছর ধরে বাড়িতে তালাবদ্ধ করে রেখেছিল। খেয়াল রাখা তো দূর অস্ত, ঠিক ভাবে খেতে মত দিত না। সপ্তাহে একবার বৃদ্ধা মা কে খাবার আর বিস্কুট পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। ব্যাস এই টুকুই, বাকি মায়ের দিকে ফিরেও তাকাতো না।
অথচ এমন নয় যে তার দুই ছেলের আর্থিক কোনো সমস্যা আছে। যথেষ্ট প্রতিষ্ঠিত নিজের নিজের জীবনে তারা। একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ ইন্সপেক্টরের, তার নাম শানমুগাসুন্দরাম এবং তার ভাই ভেঙ্কটেসন যে দূরদর্শনের একজন কর্মচারী।
সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সত্বেও দুজনেই তাদের মা জ্ঞানজ্যোতি দেবীকে বাড়িতে তালাবদ্ধ করে রেখেছিলেন। একা ঘরে অপর্যাপ্ত সামগ্রী সমেত বাস করতেন বৃদ্ধা। মাঝে মাঝে প্রতিবেশীরা জানলা দিয়ে জলখাবার ইত্যাদি বৃদ্ধার হাতে দিয়ে যেতেন। কিছুদিন বাদেই বয়সের ভারে নুয়ে পড়া ওই বৃদ্ধার নগ্ন হয়ে মেঝেতে পড়ে থাকার একটি ভিডিও দেখে কোনো এক ব্যক্তি ১৮১ নম্বরে কল করে সমাজকল্যাণ দপ্তরে খবর দেয়। এরপরই দুই মহিলা কর্মী পুলিশ সমেত ওই বাড়িতে পৌঁছন। পুলিশের সাহায্যে দরজা ভেঙ্গে ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করেন তারা। বিমলা নামে এক উদ্ধারকারী কর্মী এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বলেন, “ওই বৃদ্ধা চলৎশক্তিহীন হয়ে পড়েছিলেন। দাঁড়ানোর ক্ষমতা ছিল না। এত বছর একা থাকতে থাকতে মানসিক সুস্থতা হারিয়ে ফেলেছেন। দরজা ভেঙ্গে তাঁর কাছে যেতেই হিংস্র আচরণ করতে থাকেন।
আপাতত বৃদ্ধির চিকিৎসা চলছে। মনোবিদ দেখানো হয়েছে তাকে। বৃদ্ধা মায়ের খেয়াল না রাখা এবং অন্যায় ভাবে ঘরে বন্দি করে রাখার অভিযোগে তাঁর দুই ছেলের বিরুদ্ধে বর্ষীয়ান নাগরিক আইনের অধীনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
জানা গিয়েছে ২০০৯ সালে জ্ঞানজ্যোতি দেবীর মৃত্যুর পর মেয়ের কাছেই বাস করতেন তিনি। কিন্তু বছর দুয়েকের মধ্যে মেয়ে মারা যান। বাকি দুই ছেলে তার দায়িত্ব নিতে চায়নি। মায়ের দায়িত্ব কে বোঝা হিসেবেই দেখেছেন তারা। তাই এমন অমানবিক আচরণ। ঠিক মতন খাবার না দেওয়া, বাড়িতে আটকে রাখা। অবশেষে মুক্তি পেলেন বৃদ্ধা। বৃদ্ধার এমন পরিণতিতে হতবাক পাড়া প্রতিবেশীরাও।