খাবার অবশিষ্ট থাকলে তা ফ্রিজে রাখা হয় এবং পরে সেটি খাওয়া হয়। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, খাবার বেশিক্ষণ ফ্রিজে রাখা উচিত নয়, তবে খাবার যখন সংরক্ষণ করার হয় তখন ফ্রিজই একমাত্র ভরসা। কিন্তু কয়েকদিন আগে একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে, যেখানে এক ছাত্র রাতে ফ্রিজ থেকে খাবার খেয়েছিল, পরদিন তার পরিস্থিতি এমনই দাঁড়ায় যে তার পা কাটতে হয়। আসলে তার কিডনি কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল এবং তার শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটে। এরপর অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় চিকিৎসকদের এমন পদক্ষেপ নিতে হয়। তাই আপনিও যদি দীর্ঘদিন ফ্রিজে রাখা খাবার খেয়ে থাকেন, তাহলে এই লেখাটি অবশ্যই পড়ুন।
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক ছাত্র যার নাম জেসি সে সম্প্রতি এক মারাত্মক অবস্থার সম্মুখিন হয়। তার রুমমেট আগের রাতে রেস্তোরাঁ থেকে চিকেন এবং নুডুলস এনেছিল এবং খাবারগুলি রুমে এনে ফ্রিজে রেখেছিল। পরদিন সকালে যখন জেসি সেই খাবারটি বার করে খায় আর তার কিছুক্ষণ পরেই সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার খুব জ্বর উঠে যায়। তাই জেসিকে অবিলম্বে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তার হৃদস্পন্দন হঠাৎ করে বেড়ে ১৬৬ বিট প্রতি মিনিটে হয়ে যায়। বাধ্য হয়েই তাঁকে ওষুধ প্রয়োগ করে আচ্ছন্ন করা হয়। তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে এবং তাকে হেলিকপ্টারে করে চিকিৎসার জন্য অন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়।
তথ্য অনুযায়ী, জেসির কোনো ধরনের অ্যালার্জি ছিল না বা সে কখনো মদ্যপান করতো না। কিন্তু সে প্রতি সপ্তাহে ২ প্যাকেট সিগারেট এবং প্রায় প্রতিদিন গাঁজা সেবন করত।
রিপোর্টে বলা হয়েছে যে রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ২০ ঘন্টা আগে পর্যন্ত সুস্থ ছিল। কিন্তু রেস্তোরাঁর চিকেন ও নুডুলস খাওয়ার পর থেকেই তার পেটে ব্যথা ও বমি বমি ভাব শুরু হয়। একসময় তার ত্বক বেগুনি হতে শুরু করে এবং তাকে পরীক্ষার জন্য হাসপাতালের অন্য বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে জানা যায়, জেসি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন, যার কারণে তার কিডনি কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে এবং তার রক্তও জমাট বাঁধতে শুরু করেছে।
তার রক্তে এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে, যা মারাত্মক সেপসিসের লক্ষণ। জেসির শরীরে সেপসিস ছড়িয়ে পড়লে চিকিৎসকরা তার হাতের সব আঙুল কেটে ফেলতে এবং হাঁটুর নিচের পাও কেটে ফেলতে বাধ্য হয়। ২৬ দিন পর জেসি চেতনা ফিরে পেলেও তার জীবন পুরোপুরি বদলে যায়।
সেপসিস এমন একটি রোগ, যা শরীরে কোনো না কোনো সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। সেপসিস শরীরে বৃদ্ধি পায় তখনই যখন একটি বিদ্যমান সংক্রমণ আপনার শরীরের অনাক্রম্যতাকে বা ইমিউনিটি কে প্রভাবিত করে। অর্থাৎ, আপনি যখন কোনো সংক্রমণে আক্রান্ত হন, তখন আপনার ইমিউন সিস্টেম এর সাথে লড়াই করে, কিন্তু যখন এই প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তখন তাকে সেপসিস বলে। সেপসিসের কারণে জ্বর, দ্রুত হৃদস্পন্দন এবং শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দেয়। সেপসিস একটি গুরুতর সমস্যা যার অবিলম্বে চিকিত্সা প্রয়োজন। যদি চিকিৎসা না করা হয় তবে এটি মারাত্মক হতে পারে। এর শেষ পর্যায় হল সেপসিস শক, যা অর্গান ফেইলিউর, হার্ট ফেইলিউর, স্ট্রোক এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
ওই ছাত্রর ক্ষেত্রে রেস্তোরাঁর খাবারে ব্যাকটেরিয়া কোথা থেকে এসেছে তা স্পষ্ট করেননি চিকিৎসকরা। কিন্তু আপনিও যদি রেস্তোরাঁর খাবার ফ্রিজে রাখেন, তাহলে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সর্বদা বাড়িতে রান্না করা খাবার খান, রাসায়নিক সস বা কৃত্রিম পণ্য ব্যবহার করবেন না। খাওয়ার পর কোনো অ্যালার্জি বা সংক্রমণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।