গৃহস্থালীর কাজ করতে গিয়ে দিনের বেশিরভাগ সময়টাই চলে যায় বেশিরভাগ মহিলার। এই কাজে তাদের কোনো ছুটি নেই। বছরের ৩৬৫ দিনের প্রতিদিনই তাদের এই কাজ চলছে। এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে, ভারতীয় মহিলারা প্রতি দিন গড়ে প্রায় ৬ ঘণ্টা কাটান গৃহস্থালীর কাজ করে। এর মধ্যে রয়েছে রান্নাঘরের কাজ, ঘর ঝাড়া, ঘর মোছা কত কি। যদি এমন কোনো যন্ত্র থাকতো যা জাদু বলে এই সব কাজের ঘাটনির পরিমাণ অনেকটা কমিয়ে দিতে পারতো? কেমন হত? এই ভাবনা থেকেই তাক লাগিয়ে দিল মধ্যপ্রদেশের কিশোরী নবশ্রী ঠাকুর। তবে কোনো জাদু বলে নয়, বিজ্ঞানের সাহায্যে আর তার উদ্ভাবনী শক্তির জোরে।
নবশ্রীর মা একজন গৃহবধূ, দিনের বেশিরভাগটাই যাঁর অতিবাহিত হয় বাড়ির কাজ কর্ম সারতে সারতে। বিশেষ করে রান্না বান্না সারতে। অনেক দিন ধরেই তার চোখে পড়ত মায়ের এই পরিশ্রম। মনে মনে ভাবত যদি সত্যিই এমন কোনও যন্ত্র বানিয়ে ফেলা যেত, যা মায়ের পরিশ্রম কিছুটা কমাবে। অনেক ভেবে এমন যন্ত্র বানিয়ে ফেলেছে নবশ্রী। সেই যন্ত্রে খুব সহজেই ৮ রকমের রান্নাঘরের কাজ সেরে ফেলা যাচ্ছে।
কী উপায়ে এই গৃহের কাজ সারার যন্ত্র বানিয়েছে নবশ্রী? সংবাদমাধ্যমকে এই কিশোরী জানিয়েছে, শুরুর দিকে এই ভাবনা চিন্তা মাথায় আসতে যন্ত্রের নকশার ব্যাপারে ভেবে ফেলে সে বুদ্ধি খাটিয়ে। মাথায় আসতেই যন্ত্রের নকশা কাগজে এঁকে ফেলে সে। নবশ্রীর স্কুলের বিজ্ঞানের শিক্ষিকা আরাধনা পটেল তাকে যন্ত্রের নকশা বানাতে সাহায্য করেন। সেই নকশার যন্ত্র নিয়ে নবশ্রী পৌঁছয় স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছে, যিনি পেশায় কাঠ মিস্ত্রি। ছবি দেখে তিনি নকশা অনুযায়ী যন্ত্রটি বানিয়ে ফেলার।
কোন কোন কাজ হবে এই যন্ত্রে? নবশ্রীর মা রাজিনি এই যন্ত্র পেয়ে ভীষণ খুশি। তিনি জানান, খুব সহজেই রান্নাঘরের আটটি ধরনের কাজ তিনি এর দ্বারা করে ফেলতে পারছেন। তার মধ্যে সবজি কাটা, কোনো কিছুর নির্যাস বার করা, মশলাপাতি গুঁড়ো করা, রুটি বেলার ইত্যাদি। তার থেকেও বড় কথা এই কাজগুলি আগে করতে তাঁর যত সময় লাগত, এখন তার অর্ধেক সময় লাগে না।
যন্ত্রটি ইতিমধ্যেই ভীষণ চর্চিত হয়েছে নবশ্রীদের এলাকায়। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এই যন্ত্রের খবর ছড়িয়ে পড়েছে পুরো দেশেই। কেমন খরচ হয়েছে যন্ত্রটি বানাতে? নবশ্রী বলেন, কাঠ মিস্ত্রির খরচ মিলিয়ে সেগুন কাঠে এই যন্ত্রটি বানাতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩০০০ টাকা। নবশ্রীকে যন্ত্রটি বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছে ‘ন্যাশনাল ইনোভেশন ফাউন্ডেশন’। শুধু তাই নয়, তাকে ‘ইনস্পায়ার’ পুরস্কারও দিয়েছে সরকারি এই প্রতিষ্ঠান।