কোথাও অল্প কেটে বা ছড়ে গেলেই সেই স্থানের ক্ষত নিরাময়ে আর কাটা ছেরার ক্ষতের স্থানকে কোনো সংক্রমন থেকে সুরক্ষিত রাখতে আমাদের ভরসা ব্যান্ড-এইড (Band-Aid)। ক্ষতস্থানে একবার এই ব্যান্ড-এইড লাগিয়ে নিতে পারলেই হবে। ধুলো, বালি, জল, কাদা ইত্যাদি অনেক কিছু থেকেই কোনোরকম সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে না আর। জার্মান শব্দকোষ অনুযায়ী ‘ব্যান্ড’ শব্দের অর্থ হলো ‘টেপ’। সুতরাং শাব্দিকভাবে ব্যান্ড-এইডের অর্থ হলো সহায়তা প্রদান করে যে টেপ। কাটা-ছেড়ায় বহুল ব্যবহৃত চিকিৎসা উপকরণ হলো ব্যান্ড-এইড। জানেন এই ব্যান্ডেড এর উদ্ভাবন হলো কি করে? ব্যান্ডেজটির প্রথম যে ভাবে তৈরি হল সেই কাহিনি কিন্তু বেশ মজার।
ওষুধপত্র আর চিকিৎসা সরঞ্জাম উৎপাদনকারী আমেরিকান প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিখ্যাত ‘জনসন অ্যান্ড জনসন’ কোম্পানি। সেই কোম্পানির নিউ জার্সির হাইল্যান্ড পার্ক শাখায় চাকরি করতেন আর্ল ডিকসন নামের এক ব্যক্তি। এই ডিকসনের স্ত্রীর জোসেফাইনের সাথে প্রায়শঃই নানা ছোটো খাটো দুর্ঘটনা ঘটত। মাঝে মধ্যেই রান্নার সময় তিনি হাত পুড়িয়ে ফেলতেন, বা সবজি কাটার সময় কেটে যেত হাত। স্ত্রীর এমন দুর্দশা দেখে আর্ল ডিকসনের মনে খুব চিন্তা হত।তখন তিনি যে ‘জনসন অ্যান্ড জনসন’ কোম্পানির দুটি পণ্য- টেপ এবং গজ কাপড় একত্রে নিয়ে ব্যান্ডেজ বানিয়েছিলেন। সেখান থেকেই যাত্রা শুরু ফার্স্ট এইড নামক চিকিৎসা সরঞ্জামটির।
আর্ল ডিকসনের তৈরী এই ব্যান্ডেজটি কারো কোনো সাহায্য ছাড়াই ডিকসনের স্ত্রী জোসেফাইন নিজের কাঁটাছেরায় সহজে প্রয়োগ করতে পারতেন। স্ত্রীর ক্ষতস্থানে এত উপকারে আসছে দেখে ডিকসন ‘জনসন অ্যান্ড জনসন’ কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকেও তার তৈরী ব্যান্ডেজটির বিষয়ে জানান। ‘জনসন অ্যান্ড জনসন’ কোম্পানির উপরমহলের কর্তারা তৈরী ব্যান্ডেজটির ব্যাপারে আকৃষ্ট হয়ে এটিকে তার কোম্পানির ব্র্যান্ডের আওতায় ‘ব্যান্ড-এইড’ নাম দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন আর বিপণন করা শুরু করে।
ব্যান্ডেড আকারে ছোট, ক্ষতস্থানে নিজে নিজেই ব্যবহার করা যায় এবং ‘জনসন অ্যান্ড জনসন’ এটি বাজারে আনার পর-পরই এটি বহুল জনপ্রিয়তা পায়। এই জনপ্রিয় আবিষ্কারটির জন্য কর্মক্ষেত্রে আর্ল ডিকসনের ক্যারিয়ারও বেশ উন্নতি লাভ করে। ১৯৫৭ সালে ডিকসন এই কোম্পানির থেকে অবসর নিয়ে নেন। অবসরের আগে তিনি ‘জনসন অ্যান্ড জনসন’ কোম্পানিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ অবধি পৌঁছেছিলেন।
১৯২০ সালে ব্যান্ড-এইড প্রথম উদ্ভাবন হলেও প্রথমে এটি ছিল সম্পূর্ন ভাবে হাতে তৈরী। ১৯২৪ সালে ‘জনসন অ্যান্ড জনসন’ কোম্পানি মেশিনে তৈরী ব্যান্ড-এইড প্রস্তুত করে এবং এর পর থেকেই এর জনপ্রিয়তা বাজারে আরো বেড়ে যায়। ১৯৩৯ সাল নাগাদ সনিটাইজড ও জীবাণুমুক্ত ব্যান্ড-এইডের বিশ্বব্যাপী বিপণন শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলার সময়ে ভীষণ ভাবে কাজে এসেছিল এই ব্যান্ড-এইড। বহু সৈনিকের ক্ষতস্থান মেরামতে কাজে এসেছিল।
ব্যান্ড-এইড তৈরীর পর পার হয়ে গেছে ১০০ বছর। এখনও ফার্স্ট এইড বক্সে এই ব্যান্ড-এইডের অত্যাবশকীয় একটি জিনিস। আর তার এই বিশ্বজোড়া খ্যাতির পিছনে দায়ী আর কিছুই নয়, এক স্বামীর তার স্ত্রীর প্রতি প্রেম।