মেয়ে কে নিয়ে একাই থাকতেন মহিলা। কিন্তু এরপর কি হয়েছে তার তা কেউ বলতে পারেনি। যখন কেউ বা কোনও আত্মীয় দোলাকে তার মার কথা জিজ্ঞেস করতেন তখন তিনি জানাতেন যে হয় তার মা বাড়িতে নেই বা হয়তো কলকাতায় গিয়েছেন। এমনকি নিজের মা কে অসুস্থ বলেছেন অনেককেই। কিন্তু তার যে কি ঘটেছিলো তা কেউ জানতো না। কিন্তু এই শনিবার দিন সব ঘটনা সামনে এলো। এই দিন দোলার এক আত্মীয় দোলার সাথে দেখা করতে এসেছিল আর তখনই দোলার মা মন্দিরার কথা জিজ্ঞেস করেন। আগের মতই উত্তর দেয় দোলা। যখনই ওই আত্মিয়া প্রশ্ন করেন তখনই একইরকম উত্তর পায়, যে দোলার মা বাড়িতে নেই, সন্দেহ হয় ওই আত্মিয়ার যে একজন বৃদ্ধা কি করে রোজ বাইরে থাকেন। আর এই সন্দেহের বসেই জোর করে ঘরে ঢোকেন ওই আত্মিয়া, আর এসেই হতবাক তিনি, মেঝেতে পরে রয়েছে দোলার মায়ের কঙ্কালসার দেহ। তারমানে দোলার মা মন্দিরা দেবী বহুদিন আগেই মারা গিয়েছেন। যদিও কতদিন আগে উনি মারা গেছেন , তা স্পষ্ট নয়। পুলিশ এসে উদ্ধার করেছে ওই কঙ্কাল।
এই ঘটনাটি ঘটেছে নদিয়ার ধুবুলিয়া থানা এলাকায়। বয়স ৫৬এর এই মৃতার নাম মন্দিরা দাস। ওনার মেয়ে দোলা দাস, মায়ের মৃত্যুর পর একই বাড়িতে বসবাস করতেন তাঁর মৃতদেহের সঙ্গে বলে জানা গিয়েছে। ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে এলাকায়।
পুলিশের তদন্তে অনুমান করা হচ্ছে যে , মায়ের মৃতদেহ আগলে রাখেছিলেন মেয়ে প্রায় ছ’মাস ধরে। মৃতার এক আত্মীয়ার কাছ থেকে শনিবার সন্ধ্যায় খবর পেয়ে ধুবুলিয়া থানার পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। অভিযোগ, মায়ের মৃত্যুর খবর কোনও আত্মীয় বা প্রতিবেশীকে জানতে চাননি মেয়ে দোলা। তাঁকে মায়ের কথা প্রতিবেশীরা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলতেন, আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছেন কলকাতায়। ঘটনাস্থলে পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। ধুবুলিয়া থানার পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
পরিচারিকার কাজ করতেন দোলা ওই এলাকায় থাকা একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখার অফিসে। অনেক সময় অফিস যেতেন মায়ের দেহ বাড়িতে ফেলে রেখেও। তাছাড়া আর অন্য কোনও জায়গায় যেতেন না। প্রতিবেশীদের থেকে জানা গেছে যে সব সময় দরজা জানলা বন্ধ রাখতেন দোলা, রান্নাও নিজেই করতেন। ঘটনা সবার সামনে আসার পর দোলা বলেছেন যে সে তার মাকে দুধ গরম করে খেতে দিতেন তিনি। তিনি তার মায়ের মৃত্যু হয়েছে কবে তাও সে জানেনা। দোলা আরও বলেন, ওই ঘরে শুয়ে মা বলেছিল, আমি ঠিক সুস্থ হয়ে উঠে আসব। যাতে মৃত্যু হলেও তা কাউকে না জানান, সেই পরামর্শই নাকি তাঁর মা দোলাকে দিয়েছিলেন। মেয়ের দাবি, তাঁকে সাবধান করে মা বলেছিলেন, সবাই লুঠেপুটে খাবে মৃত্যুর খবর পেলে, তাই কাউকে জানানোর প্রয়োজন নেই। তবে মায়ের দেহ এ ভাবে বাড়িতে কী কারণে ফেলে রাখলেন তিনি, তা স্পষ্ট নয়।