Dainik Sangbad – দৈনিক সংবাদ
Image default
ট্রেন্ডিং

এই দোকানের কচুরীর স্বাদে মুগ্ধ হতেন স্বয়ং শ্রীরামকৃষ্ণদেব! সেই প্রাচীন দোকান আজও আছে কলকাতার বুকে

খাদ্যরসিক হিসেবে বাঙালির খ‍্যাতি সর্বজনবিদিত। আর বাঙালির সকালবেলার জল আহারের রসনা তৃপ্তির অন্যতম উপকরণ হল ‘কচুরি’। কলকাতায় রাস্তার পাশে, অলিতে গলিতে, ফুটপাথে দেখা মেলে অসংখ্য তেলেভাজার দোকানের। মূলত উত্তর কলকাতার কচুরি তেলেভাজাই বেশী জনপ্রিয়। কলকাতার বুকে কত দোকান তৈরী হয়েছে আবার হারিয়েও গিয়েছে। এরকম‌ই কয়েকটি দোকান সময়ের সাথে সাথে যে শুধু নাম ডাক বাড়িয়েছে তাই নয় বরং হয়ে উঠেছে কিংবদন্তি। ইতিহাসের অনেক গুণী ব্যাক্তিও অনুরাগী ছিল এই সমস্ত দোকানের উৎকৃষ্ট খাবারের। এরকমই একটি দোকান হল বরানগরে অবস্থিত ‘মুখোরুচি’। স্বয়ং রামকৃষ্ণ এই দোকানের কচুরির বিশেষ অনুরাগী ছিলেন। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেবের ইতিহাস জড়িয়ে আছে এই দোকানের সাথে। শ্রীরামকৃষ্ণের কথামৃত-এর পাতায় আছে এই দোকানের উল্লেখ।

কি সেই ইতিহাস:

দক্ষিণেশ্বরের নিকটেই বরানগর। এর একদিকে চলে গিয়েছে গোপাললাল ঠাকুর রোড, তার অন্যপ্রান্তে গেছে কাশীপুর রোড। এই দুই রাস্তার মোড়ে রয়েছে এক কচুরি তেলেভাজার দোকান যার নাম ‘মুখোরুচি’। যদিও মানুষের কাছে এই দোকান ‘ফাগুর দোকান’ নামেই পরিচিত। এই সুপ্রাচীন দোকানটির মালিক ছিলেন ফাগুলাল সাউ। এই দোকানের তেলেভাজার অনুরাগী ছিলেন স্বয়ং ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেব। তিনি প্রায়ই আসতেন এই কচুরীর দোকানে। ফাগু সাউ ভীষণ অ্যাপায়ানও করতেন রামকৃষ্ণদেবকে। সেইসময় ফাগুর তেলেভাজার দোকান ছিল একদম ছোট ঝুপড়ির মত। এর পাশেই ছিল একটি কালীমন্দির। সেই প্রাচীন কালীমন্দির আজও আছে।

একবার ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কলকাতা থেকে ঘোড়ার গাড়িতে করে দক্ষিণেশ্বরে ফিরছেন। সাথে ছিলেন ভ্রাতুষ্পুত্র রামলাল এবং ঘোড়ার গাড়ির কোচম্যান। গাড়ি যখন ফাগুর দোকানের কাছাকাছি পৌঁছেছে তখন রামকৃষ্ণদেব ভ্রাতুষ্পুতত্রের কাছে জানতে চাইলেন, “ট্যাকে পয়সা আছে?” রামলাল হ্যাঁ উত্তর দিতেই ঠাকুর বললেন, “যাও কচুরি কিনে আনো।” রামলাল তৎক্ষণাৎ গেলেন কচুরি কিনে আনতে, ঠাকুর রইলেন গাড়িতে। ঠাকুর নিজে কচুরী খেতে এসেছেন শুনে ফাগু তাঁর জন্য দিলেন জল ও দুই খিলি পান। তারপর দিলেন কচুরি। এদিকে গাড়িতে কাছে এসে রামলাল দেখেন ঠাকুর সেখানে নেই। কোচম্যান জানান, ঠাকুর হেঁটে হেঁটে কোথাও চলে গিয়েছেন। রামলাল ঠাকুরের খোঁজে ছুটতে লাগলেন। অনেক খোঁজার পর দেখা পেলেন ঠাকুরের। ঠাকুর সেই সময় ভাবস্থ। ভাবের ঘোরে তিনি বলছেন, “ফাগুর কচুরি খাব”। এতটাই প্রিয় ছিল এই দোকানের কচুরী। শ্রীরামকৃষ্ণের কথামৃতে উল্লেখিত যে নিজের প্রিয় ভক্ত এবং প্রখ্যাত নাট্যকার শ্রী গিরিশচন্দ্র ঘোষকে ফাগুর দোকানের কচুরি ও মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করছেন ঠাকুর।

আজও এই দোকানে এলেই দেখা যাবে রয়েছে একটি বাঁধানো ফ্রেম। সেখানে লেখা,“এই কালী মন্দিরের ঠিক উত্তরপার্শ্বে ফাগুর দোকান ছিল। ফাগুর দোকানের কচুরি খাইতে শ্রী শ্রী শ্রীরামকৃষ্ণদেব ভালবাসিতেন যেখানে সেই খোলার চালের খাবার দোকান ছিল সেখানে এখন পাকাবাড়ী উঠিয়াছে, একখানি খাবারের দোকানও সেই স্থানে চলিতেছে নাম –“মুখোরুচি”। ফটোফ্রেমে লেখাটির নিচে বরানগর রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের ১৯৬৭ সালের ‘সোভিনিয়র’-এর উল্লেখ আছে।

Related posts

অনলাইন-এ লেনদেনে মারাত্মক প্রতারণার ফাঁদ! বাঁচতে কড়া সতর্কতা জারি SBI-এর!

News Desk

তবে কি বাংলায় করোনার সমাপ্তি হতে চলেছে? কি বলছে পরিসংখ্যান!

News Desk

জীবন বাঁচাতে বানানো হল সিমেন্টের পাঁজর, জটিল অপারেশনের নজির কলকাতার চিকিৎসকদের

News Desk