বিয়ের সাজে অথবা বিকিনি পরা অবস্থায় ‘সাহসী’ ছবি তুলে মোটা টাকা উপার্জন করুন। এমনই বিজ্ঞাপন দিয়ে ফাঁদ পেতেছিলেন শিলিগুড়ির এক যুবক। সেই ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন একাধিক তরুণী। ‘সাহসী’ ছবি তোলার পর বহু তরুণীকে ব্ল্যাকমেল করে গয়না লুঠ করেছিলেন ওই যুবক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হুগলির চুঁচুড়ায় ধরা পড়ে গেলেন কৃষ্ণ ঘোষ নামে শিলিগুড়ির ওই যুবক। রবিবার তাঁকে সাত দিনের পুলিশ হেপাজতে পাঠিয়েছে চুঁচুড়া আদালত।
ঘটনার সূত্রপাত মাস চারেক আগে। সেই সময় হুগলির ব্যান্ডেলের এক মহিলা চুঁচুড়া থানায় অভিযোগ করেন, তাঁর গয়না লুঠ হয়েছে। কিন্তু বহু চেষ্টা করেও পুলিশ তখন অভিযুক্তের নাগাল পায়নি। শনিবার বাগুইআটির দুই তরুণী ফের একই অভিযোগ করেন চুঁচুড়া থানায়। তাঁদের বক্তব্য, কৃষ্ণ ঘোষ নামে ওই যুবকের ফেসবুক প্রোফাইলে তাঁরা ফোটোশ্যুটের মাধ্যমে টাকা আয়ের কথা জানতে পারেন। সেই সূত্রেই গড়ে ওঠে যোগাযোগ। ওই দুই তরুণীর দাবি, শাড়ি, বিয়ের সাজ, সালওয়ার এবং বিকিনি— এমন নানার সাজে ছবি তোলানোর জন্য মডেলকে আলাদা ‘সাম্মানিক’ দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছিল কৃষ্ণ। তরুণীদের দাবি, এক বার ফোটোশ্যুটের জন্য সর্বাধিক ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয় বলেও তাঁদের জানান কৃষ্ণ। তরুণীদের আরও দাবি, বিয়ের সাজে ছবি তোলানোর জন্য তাঁদের নিজেদের গয়না আনা বাধ্যতামূলক বলেও জানান ওই ব্যক্তি। এর পর বাগুইহাটির ওই দুই তরুণীকে পোলবার একটি হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ঘর ভাড়া নিয়ে ফোটোশ্যুট করা হয়। এর পর তাঁদের ভুল বুঝিয়ে সমস্ত গয়না একটি ব্যাগে ভরে তা নিয়ে চম্পট দেয় কৃষ্ণ।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, কৃষ্ণ আদতে শিলিগুড়ির ভক্তিনগরের বাসিন্দা। তিনি চুঁচুড়া স্টেশনের কাছে একটি আবাসনে ভাড়া থাকতেন গত বছর দুয়েক ধরে। পুলিশ আরও জানতে পারে, কৃষ্ণ একটি স্কুটি ব্যবহার করতেন, সেটা তাঁর বান্ধবীর। পাশাপাশি চুঁচুড়ার একটি শপিং মলের সিসি টিভির ফুটেজ থেকে কৃষ্ণের ছবি পেয়ে যান তদন্তকারীরা। এর পর অভিযুক্তের ফোনের টাওয়ার লোকেশান ট্র্যাক করে পুলিশ কৃষ্ণের আবাসনে পৌঁছে যায়। শনিবার রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ফেসবুকে বন্ধুত্বের ফাঁদ পেতে মহিলাদের ফোটোশ্যুটের নামে টাকা আয়ের টোপ দিত। এর পর ফোটোশ্যুটের নামে তাদের গয়না হাতিয়ে দিন। এমনকি বিয়ের সাজ, শাড়ি-সহ নানা ধরনের পোশাকে ছবি তোলার নামে ‘সাহসী’ ছবিও তুলতেন তিনি। পুলিশ সূত্রে খবর, এর পর সেই ছবি দেখিয়ে ওই মহিলাকে ব্ল্যাকমেল করতেন তিনি। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, শুধু টাকা হাতানোই নয়, তরুণীদের কয়েক জনের সঙ্গে অশালীন আচরণও করেছেন কৃষ্ণ। সেই সব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তদন্তকারীরা আরও জানতে পেরেছেন, সম্প্রতি বেসরকারি স্বর্ণ ঋণদানকারী সংস্থায় গয়না বন্ধক রেখে ঋণও নিয়েছেন কৃষ্ণ। তার ব্যাঙ্ক লেনদেনের তথ্যও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি শিলিগুড়িতে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আছে কি না, কেন তিনি দু’বছর আগে সেখান থেকে চলে এসেছিলেন তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কত জন মহিলাকে তিনি ইতিমধ্যেই ব্ল্যাকমেল করেছেন সেই তথ্যও জানতে চান তদন্তকারীরা। পাশাপাশি মহিলাদের বিকিনি পরা ছবি কোনও নীল সাইটে বিক্রি করে দেওয়া হত কি না তা-ও পরীক্ষা করা হচ্ছে।