আমাদের খুব কাছের উপকারী পতঙ্গ হল মৌমাছি । এই পতঙ্গ খুব পরিশ্রমী হয় এরা ফুলের থেকে মধু সংগ্রহ করে মধু জমায় মৌচাকে। কিন্ত এই মৌমাছিই পচা মাংস আবর্জনা খায় এটা শুনেছেন কখনও?
হ্যাঁ, এমন শকুনরূপী মৌমাছির সন্ধানও পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কীটতত্ত্ববিদরা মধ্য আমেরিকার দেশ কোস্টারিকার গহীন রেইনফরেস্টে কয়েক দশক আগে প্রথম তিনটি মৌমাছির প্রজাতি খুঁজে পান, যারা মরা পচা মাংস খেতে বেশি পছন্দ করে ফুলের মধুর চেয়ে।
তবে সবার অগোচরেই ঘটছে ছন্দপতন হাজারো বছরের এমন স্বাভাবিকতার মাঝে। মৌমাছির কিছু প্রজাতি ফুলের ওপর নির্ভরতা কাটিয়ে উঠছে এমনটা গবেষণায় দেখা গেছে। এরা পুরোপুরি মাংসাশী প্রাণীতে পরিণত হয়েছে নিরামিষ জীবন ছেড়ে।
কিছু মৌমাছির মুখে পঁচা মাংস ছিড়ে খেতে গজিয়েছে দাঁত, এমনকি এদের পরিপাকতন্ত্রও প্রস্তুত হজমে গণ্ডগোল এড়াতে।
রীতিমতো বিস্মিত বিজ্ঞানীরা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে সম্পূর্ণ মাংসাশী মৌমাছির খোঁজ পেয়ে। তারা বলছেন, সম্ভবত এমন বিবর্তন মধু সংগ্রহের প্রবল প্রতিযোগিতা এড়াতেই ।
প্রাণিবিজ্ঞানের প্রচলিত ধারণায়, বিভিন্ন ফুলের থেকে মধু সংগ্রহ করে বাঁচে। ইংরেজিতে এই মৌ-রসকে নেকটার বলা হয়। ফুলের রেণুর মধ্যে একপ্রকার মিষ্টি তরল থাকে যাকে নেকটার বলা হয়। দুটি পাকস্থলি রয়েছে মৌমাছির শরীরে। সে একটিতে মৌ রস জমা করে, আর স্বাভাবিক ভাবে খাবার পরিপাক হয় অন্যটিতে।
তবে এই রুটিনের কোনো বালাই নেই মাংসাশী মৌমাছির বেলায়। সম্প্রতি আমেরিকান সোসাইটি অফ মাইক্রোবায়োলজিতে প্রকাশিত হয়েছে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, রিভারসাইড এর গবেষক দলটির গবেষণাটি। ‘ভালচার বি’ বা শুকুনি মৌমাছি নামে পরিচিতি পেয়েছে মাংস খেতে সক্ষম মৌমাছিরা। ‘শকুনি মৌমাছির অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম অ্যাসিড সম্মৃদ্ধ ব্যাকটেরিয়ায় পরিপূর্ণ, সাধারণভাবে যা অন্যান্য মৌমাছিতে একেবারেই দেখা যায় না। এ ধরনের ব্যাকটেরিয়া দেখা যায় শকুন, হায়েনার মতো প্রাণীর পরিপাকতন্ত্রেও। এসব ব্যাকটেরিয়া খাদ্য গ্রহণকারী প্রাণীকে রক্ষা করে পঁচা মাংসের রোগজীবাণু থেকে।’
কোস্টারিকার বনে-জঙ্গলে দেখা মিলেছে শকুনি মৌমাছির। ইউসিআর গবেষক দলটি গাছে ঝুলিয়ে রেখেছিল মুরগির কাঁচা মাংসের টুকরো এদের আচরণ ও খ্যাদ্যাভাস পর্যবেক্ষণে। দেখা গেছে, শুকুনি মৌমাছিরা কিছুক্ষণের মধ্যেই এর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এমন প্রজাতিও পাওয়া গেছে সেখানে যারা মাংস ও মধু- দুটিই খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।