হিন্দুদের রীতি অনুযায়ী হোলি একটি পূণ্য উৎসব। ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১৮ এবং ১৯শে মার্চ এই বছর হোলি উদযাপিত হয়েছে। তবে এই একই সময়ে ঝাড়খণ্ডের সাঁওতাল আদিবাসী সমাজে জল ও ফুলের হোলি শুরু হয়েছে। এই উৎসব শুরু হয় প্রায় এক পাক্ষিক সময় আগে থেকে। সাঁওতালি সমাজ এটিকে বাহা উৎসব হিসেবে পালন করে। এখানে ঐতিহ্যের উৎসবে রঙ যোগ করার অনুমতি নেই। এই সমাজে রঙ লাগানোর একটা বিশেষ অর্থ আছে। সমাজে কোনো যুবক যদি কোনো কুমারী মেয়ের গায়ে রঙ লাগায়, তাহলে তাকে হয় মেয়েটিকে বিয়ে করতে হবে নয়তো মোটা অঙ্কের জরিমানা দিতে হবে। হোলির আগে শুরু হয় বাহা উৎসবের প্রক্রিয়া। বিভিন্ন গ্রামে, বিভিন্ন তিথিতে পালিত হয় বাহা। বাহা মানে ফুলের উৎসবে প্রকৃতি পূজার বিশেষ অনুষ্ঠান।
এই দিনে সাঁওতাল আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকেরা তীর-ধনুক পূজা করে। তারা ঢাক-ঢোলের তালে প্রচণ্ড নাচে এবং একে অপরের গায়ে জল ঢেলে দেয়। বাহার দিনে জল ঢালারও নিয়ম আছে। যে সম্পর্কের মধ্যে রসিকতা আছে সেই সম্পর্কের মানুষের সঙ্গে জলের হোলি খেলা যায়। কোনো যুবক কুমারী মেয়ের গায়ে রং লাগালে সমাজের পঞ্চায়েত মেয়েটির সঙ্গে তার বিয়ে দেয়। যদি বিয়ের প্রস্তাব মেয়েটি গ্রহণ না করে, তবে সমাজ যুবকটিকে তার সমস্ত সম্পত্তি মেয়ের নামে করে দেওয়ার শাস্তি দিতে পারে। ঝাড়খণ্ডের পশ্চিম সিংভূম থেকে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি পর্যন্ত সাঁওতাল অধ্যুষিত এলাকায় এই নিয়ম চালু রয়েছে। এই ভয়ে কোনো সাঁওতাল যুবক কোনো মেয়ের সঙ্গে রং খেলে না। প্রথা অনুসারে, একজন পুরুষ শুধুমাত্র একজন পুরুষের সাথে হোলি খেলতে পারেন।
দেশপ্রাণিক মধু সোরেন পূর্ব সিংভূম জেলার সাঁওতালদের বাহা উৎসবের ঐতিহ্য সম্পর্কে বলেন যে আমাদের সমাজে প্রকৃতির পূজা করার রীতি রয়েছে। বাহা উৎসবে সাঁওতাল সমাজের মানুষ কানে ফুল ও পাতা দেয়। তিনি বলেন, এর অর্থ হলো পাতার রং যেমন বদলায় না, তেমনি আমাদের সমাজও তার ঐতিহ্যকে অক্ষুণ্ন রাখবে। বাহা উৎসবে যিনি পূজা করেন তিনি নায়কী বাবা নামে পরিচিত। পূজা শেষে তিনি সুখা, মহুয়া ও সাল ফুল বিতরণ করেন। এই পূজার মধ্য দিয়ে সাঁওতাল সমাজে শুরু হয় বিবাহের প্রক্রিয়া। খোদ সাঁওতাল সমাজের কিছু জায়গায় রং খেলার পর বন্যপ্রাণী শিকারের প্রথা রয়েছে। শিকারে নিহত বন্যপ্রাণী রান্না করার পর একটি গণভোজের আয়োজন করা হয়।