Dainik Sangbad – দৈনিক সংবাদ
Image default
FEATURED ট্রেন্ডিং

অর্ধশতাধিক মেয়েকে বানিয়েছে শিকার, সেনা সেজে যেভাবে পুলিশকে ফাঁকি দিত সাইকো কিলার

‘জয় হিন্দ’.. সাধারণত, যখনই পুলিশ এবং অন্যান্য বাহিনীর লোকেরা মিলিত হয়, তারা ‘জয় হিন্দ’ বলে একে অপরকে অভিবাদন জানায়। এখন ভাবুন তো কি হবে যদি একজন সাইকো কিলার (Psycho Killer) এই দুটি শব্দকে তার সবচেয়ে বড় ঢাল বানিয়ে ফেলে। জয়পুরে, পুলিশ একজন সাইকো কিলার বা সিরিয়াল কিলারকে গ্রেফতার করেছে। আগে যখনই তিনি পুলিশের সামনে আসতেন, জয় হিন্দ বলে পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে চলে যেতেন। সেই সাইকো কিলারের বিরুদ্ধে বহু মেয়েকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ রয়েছে। কতজন এখনও অবধি তার শিকার, সেই সংখ্যা কোথায় থামবে, আপাতত এ বিষয়ে পুলিশ কিছু বলতে পারছে না।

তার চলাফেরা, তার জীবন শৈলী, তার কথা বলার ধরন এবং প্রতিটি কথায় ‘জয় হিন্দ’ বলা। যেই তার সাথে প্রথমবার দেখা করত, সে তাকে সেনা অফিসার ভেবে ভুল করতো। কিন্তু এই ভুলটা যদি কোনো মেয়ে করত, তাহলে তার বিনিময়ে মৃত্যুও হতে পারত তার। প্রায় দুই মাস আদা জল খেয়ে পড়ে থাকার পর, রাজস্থানের জয়পুর পুলিশ যখন তাকে আলওয়ার থেকে গ্রেপ্তার করে, তখন পুলিশও তার কাহিনী শুনে হতবাক হয়ে যায়।

সে খুনি অবশ্যই, কিন্তু খুনি পরে। আসলে সে এমনই একজন সেক্স ম্যানিয়াক (Sex Maniac) যে প্রতিদিন একটা নতুন মেয়ে চাইত। আর নতুন মেয়ের এই ইচ্ছা কখন তাকে সেক্স ম্যানিয়াক থেকে সাইকো কিলারে পরিণত করেছিল, সে নিজেও জানত না।

জয়পুরের কার্ধানি পুলিশ কিছুদিন আগে নিওয়ারু রোডের একটি বাড়ি থেকে একটি মেয়ের মৃতদেহ উদ্ধার করে। মেয়েটি তার লিভ-ইন পার্টনারের সঙ্গে ভাড়ায় সেখানে থাকত। কিন্তু একদিন দরজা না খুললে, আশেপাশের লোকজনও তার বাড়িতে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। কিন্তু পুলিশ এসে ঘরের দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে ভিতরের দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে যায়। ওই ঘরের খাটের ওপর ভাড়াটে মেয়ে রোশনীর লাশ পড়ে ছিল। পুলিশ মৃতদেহ ময়নাতদন্তে পাঠিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।

মেয়েটির মৃত্যুর কারণ জানতে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শ্বাসরোধের কারণে মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে। যেহেতু মেয়েটির লিভ-ইন পার্টনার তার মৃত্যুর সময় থেকে নিখোঁজ ছিল, তাই এই ক্ষেত্রে প্রথম সন্দেহ তার উপর ছিল। পুলিশ খুনের অভিযোগ দায়ের করে তদন্ত শুরু করে। পুলিশ ছেলেটির মোবাইল নম্বরও খুঁজে পেয়ে যায়, কিন্তু তার ফোন নম্বরও ক্রমাগত বন্ধ আসছিল এবং এটি তাকে সন্দেহ করার আরও একটি কারণ ছিল।

এরপর প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো সাফল্য পায়নি পুলিশ। তবে ঘটনাস্থল থেকে পলাতক তরুণীর লিভ-ইন পার্টনার বিক্রম ওরফে পিন্টুর খোঁজে তল্লাশি অব্যাহত রেখেছিল পুলিশ। অবশেষে খুনি সম্পর্কে ক্লু হাতে আসে পুলিশের। কার্ধানি থানার পুলিশ একটি গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আলওয়ার জেলার তপুকরা এলাকা থেকে তাকে শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার করে। ধরা পড়ার পর সে প্রথমে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিল, মিথ্যা গল্প বললেও অচিরেই সে পুলিশের কঠোর জেরার সামনে পুরো সত্য খুলে বলে। বিক্রম ওরফে পিন্টুর বয়ান শুনে খোদ পুলিশ সদস্যরাও হাঁ হয়ে যান।

পুলিশের ভাষ্যমতে, বিক্রম ওরফে পিন্টুকে একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হলেও সে এমনই একজন সাইকো কিলার যে মেয়েদের হত্যা করতে দ্বিধা করে না। আসলে সে একজন সেক্স ম্যানিয়াক ছিল, যে প্রতিদিন একটি নতুন মেয়ে চাইত এবং এই কামনায় সে যে কোন সীমা অতিক্রম করতে প্রস্তুত ছিল। রাজস্থানের দৌসার বাসিন্দা বিক্রম প্রায় সাত বছর আগে এই ইচ্ছার কারণে বাড়ি ছেড়েছিলেন। এরপর সে কখনো আর্মি অফিসার হয়ে কখনো কখনো নিজেকে ইনকাম ট্যাক্স অফিসার বলে মেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব করতো। এরপরে সে তাদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করত এবং যখন তার মন ভরে যেত, সে হয় মেয়েটিকে ছেড়ে দিত বা তাকে হত্যা করত।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে পুলিশকে জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিক মেয়ের সাথে সে শারীরিক সম্পর্ক করেছে এবং সেই সঙ্গে অত্যাচার করেছে। যদিও জয়পুরের খুন ছাড়াও গোয়ালিয়রে একটি মেয়েকে খুনের কথা স্বীকার করেছেন তিনি। জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশের সন্দেহ যখন গাঢ় হতে শুরু করে তখন তার পুরনো ট্র্যাক রেকর্ড খতিয়ে দেখতে শুরু করে পুলিশ। পুলিশ তাদের অ্যাকাউন্টের বইয়ে এই যুবক সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পায়নি, তবে এটি নিশ্চিতভাবে জানা গেছে যে এর মাত্র এক বছর আগে অর্থাৎ ২০২১ সালের এপ্রিলে, সে গোয়ালিয়রে পূজা শর্মা নামে একটি মেয়েকে গণধর্ষণ করেছিল এবং তাকে হত্যা করা হয়েছিল। আসলে জয়পুরে বসবাসকারী ওই মেয়েটি ছিল তার বন্ধুর বান্ধবী। কিন্তু বিক্রমের বন্ধুর অভ্যাসও ছিল একই রকম। দুজনে মিলে ওই মেয়েটিকে প্রথমে জয়পুর থেকে গোয়ালিয়রে নিয়ে যায়। যেখানে দুজনেই তাকে গণধর্ষণ করে তারপর প্রাণ কেড়ে নিয়ে লাশ রেললাইনে ফেলে পালিয়ে যায়।

এর আগে ২০১৯ সালে আলওয়ার সদর এলাকায় এক নাবালিকাকে ধর্ষণ করেছিল বিক্রম ওরফে পিন্টু। এরপর টানা তিন বছর তিনি পুলিশের কাছ থেকে আত্মগোপন করেন। এ সময় তিনি মুম্বাই, চণ্ডীগড়, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করেন। এবং সর্বত্র তিনি কখনও সেনা অফিসার আবার কখনও আয়কর অফিসার হয়ে জনগণের সামনে নিজের পরিচয় দিতে থাকেন।

একইভাবে মেয়েদের কাছে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে তাদের শোষণ করতে থাকে। যখনই সে অনুভব করত যে কোনো মেয়ে তার জন্য বিপদের কারণ হয়ে উঠছে, সে তাদের হত্যা করতো। সে কতটা চালাক ছিল, পুলিশ এখন তা বুঝতে শুরু করেছে। তিনি আর্মিদের মতন চুল কাটাতেন শুধুমাত্র জনগণকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য, যাতে লোকেরা তাকে দেখে সেনাবাহিনীর লোক বলে ভুল করে। তাছাড়া পুলিশকর্মীদের ফাঁকি দিতে প্রায়ই জয় হিন্দ বলে অভিবাদন জানাতেন।

এই ২৪ বছর বয়সী সাইকো ধর্ষক কখনও হোটেল এবং স্পা থেকে মেয়েদের নিয়ে যেত, কখনও কোনও কল গার্লকে সরাসরি তার কাছে ডাকত, কখনও কোনও ডেটিং সাইট বা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে মেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব করত। তারপর তাদের প্রতারণার পাশাপাশি শোষণও করে। তাছাড়া রোশনি নামের যে মেয়েটির সঙ্গে সে জয়পুরে লিভ-ইনে থাকত এবং যাকে হত্যার পর জয়পুর থেকে পালিয়ে গিয়েছিল, সেই মেয়ের কাছ থেকেও সে ছয় লাখ টাকা প্রতারণা করেছিল। এখনো পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত করছে তার অপরাধের দিশা পেতে।

Related posts

স্ত্রীর সাথে ঘনিষ্ঠ হতে গিয়ে বেডরুম থেকে সোজা হাসপাতালে স্বামী! কি এমন ঘটলো?

News Desk

৪-৫ ঘণ্টা ধরে মাঝ নদীতে ভাসছিল মহিলা! মৃত ভেবে উদ্ধার করতে গিয়ে চমকে গেল পুলিশ

News Desk

আবারও স্বস্তি করোনার দৈনিক সংক্রমণ থেকে, অ্যাকটিভ কেস কমলো একলাখের নীচে

News Desk