ফের ছেলের হাতে খুন বাবা, মা! ভাইফোঁটা দিতে এসে দাদার হাতে খুন হতে হল বোনকেও! এবার নৃশংস ঘটনাটি ঘটেছে হুগলির ধনেখালিতে। তবে বাবা, মা ও বোনকে খুন করে স্বাভাবিক ছিলেন না পেশায় গৃহশিক্ষক ওই ব্যক্তিও। অভিযোগ, পরিবারের তিনজনকে খুন করে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি। যদিও সেই চেষ্টা সফল হয়নি। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি।
এই ঘটনায় তাজ্জব এলাকাবাসী। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম প্রমথেশ ঘোষাল। ধনেখালির দশঘড়া রায় পাড়ার বাসিন্দা বছর চল্লিশেরপ্রমথেশঘোষাল তার বাবা অসীম ঘোষাল (৬৭), মা শুভ্রা ঘোষাল (৬৪) এবং বিবাহিতা বোন পল্লবী চ্যাটার্জী (৩০)কে রড দিয়ে মেরে, ব্লেড দিয়ে গলার নলি কেটে নৃশংসভাবে খুন করেন বলে অভিযোগ। নিজেও সারা শরীরে ব্লেড দিয়ে চিরে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। যদিও তিনি কেন একাজ করলেন তা স্পষ্ট নয়।
ওই গৃহ শিক্ষক কে ‘রাজু স্যার’- নামে চেনেন সকলে। তল্লাটে তাঁর মতো অঙ্কের শিক্ষক পাওয়া দায়। সেই শিক্ষকই ‘খুনি’, তা মানতে পারছেন না অভিভাবক থেকে শুরু করে ছাত্রছাত্রীরা। হুগলির ধনেখালির ঘটনায় অবাক এলাকার বাসিন্দারা। নৃশংস এই ঘটনায় কেঁপে উঠেছে এলাকাবাসী।
মঙ্গলবার সকালে ছাত্রছাত্রীরা পড়তে গিয়ে রাজু স্যারকে ডাকাডাকি করেন। অনেকক্ষণ ডাকার পরেও তাকে বাইরে আসতে দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ছাত্রছাত্রীরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই রক্তাক্ত অবস্থায় টলতে টলতে এসে দরজা খোলেন তিনি। হাতে ব্লেড দিয়ে কাটার দাগ। আতঙ্কে চিৎকার করতে শুরু করেন তাঁরা। দৌড়ে আসেন স্থানীয়রা। তাঁরা খবর দেন পুলিশে। প্রমথেশকে আটক করে চিকিৎসার জন্য পাঠায় পুলিশ। ঘটনায় আতঙ্কিত ছাত্রছাত্রীরা। তাঁরা বিশ্বাস করতে পারছেন না রাজু স্যার এই ধরনের কোনও পদক্ষেপ নিতে পারে।
কিন্তু, এলাকাবাসীর দাবি প্রমথেশের জীবনে সমস্যা থাকলেও তিনি একজন ভালো শিক্ষক ছিলেন। তাঁরও আগে ছাত্র হিসেবে এলাকায় নামডাক ছিল তাঁর। দশঘড়ার বাসিন্দা কৃষ্ণ গঙ্গোপাধ্যায় জানান, লকডাউনের আগে ১৫০ জনের বেশি ছাত্রছাত্রীকে পড়াতেন তিনি। তাঁদের অংক করাতেন প্রমথেশ। লকডাউনের সময় তাঁর পড়ুয়া সংখ্যা কমেছিল। কিন্তু, তার আগে পর্যন্ত টিউশন পড়িয়েই মাসে প্রায় ১ লাখ টাকা রোজগার করতেন তিনি, জানা গিয়েছে এমনটাই।
হুগলির পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) আমনদীপ বলেন,‘ছাত্র পড়ানোর টাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন প্রমথেশ। মানসিক অবসাদ থেকেই সে পরিবারের তিন সদস্যকে খুন করে নিজে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা যাচ্ছে। নিজেও দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিল সে। পুরো ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’ উল্লেখ্য, অভিযুক্তর বোনের সংসারও তাকেই চালাতে হত বলে জানা গিয়েছে। এমনকী, তার বাবাও মদ্যপান করতেন। সেক্ষেত্রে পারিবারিক অশান্তি, শারীরিক অসুস্থতা সব মিলিয়ে দীর্ঘদিন অবসাদে ভুগছিলেন তিনি, স্থানীয় সূত্রে খবর এমনটাই।