ভারতের জাতীয় রাজনীতি এখন টালমাটাল পেগাসাস কাণ্ড ঘিরে। ইজরায়েলি সংস্থা কে কাজে লাগিয়ে টাপ হয়েছে সারা বিশ্বে ৫০ হাজারের বেশি ফোন। পেগাসাস স্পাইওয়্যারকে ব্যাবহার করে ১৮০ জন সাংবাদিকের ফোনে আড়ি পাতা হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ান (The Guardian) চাঞ্চল্যকর এই রিপোর্ট গতকাল প্রকাশ করেছে। এই পেগাসাস স্পাইওয়্যারের আঁচ এসে পৌঁছেছে ভারতেও। জানা গিয়েছে এই দেশেও সরকার ও বিরোধী পক্ষের নেতা মন্ত্রী মিলিয়ে ৪০ জনেরও বেশি সাংবাদিক, শিল্পপতি, সমাজকর্মী এবং বিচারপতিদের ফোন হ্যাক করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সরকার পক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে বিরোধী শিবিরের লোকেরা। অভিযোগ তুলেছে সব কিছু। যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার।
কিন্তু কী ভাবে কাজ করে এই পেগাসাস স্পাইওয়্যার? কারা এর দ্বারা আক্রান্ত? সাধারণ মানুষই বা কতখানি সুরক্ষিত?
এই স্পাইওয়্যারটি ইজরায়েলি একটি সংস্থা এনএসও (NSO) -র তৈরি একটি সফটওয়্যার, যা মোবাইলে আড়ি পাতার যন্ত্র হিসেবে কাজ করে। এর মাধ্যমে ফোনে কী কী কথাবার্তা হচ্ছে, হোয়াটসঅ্যাপে কী বার্তা আদান-প্রদান হচ্ছে তার সবটাই জানা যায়। ফোনে কী তথ্য রয়েছে, কি নথি বা ছবিও সেভ রয়েছে সেটাও দেখে নেওয়া যায় এর মাধ্যমে। অথচ যাঁর মোবাইল হ্যাক করা রয়েছে, তিনি ঘ্রুনাক্ষরেও জানতে পারেন না।
কী ভাবে কাজ করে এই পেগাসাস স্পাইওয়্যার?
প্রথমে যে ফোন হ্যাক করতে চাইছে সেই ফোনে একটি ওয়েবসাইটের লিঙ্ক পাঠানো হয়। তাতে ক্লিক করলেই মোবাইলে এই পেগাসাস স্পাইওয়্যার ইনস্টল হয়ে যায়। এ ছাড়া হোয়াটসঅ্যাপে ভয়েস কল বা ভিডিয়ো কলের মাধ্যমেও পেগাসাস ঢোকানো যায়।
কারা এই স্পাইওয়্যারের কথা ফাঁস করল?
‘পেগাসাস প্রোজেক্ট’ নামে একটি তদন্ত করেছিল ২০১৯ সাল থেকে ১৬টি সংবাদমাধ্যম মিলে। সেই রিপোর্টের কিছু অংশ রবিবার সামনে এসেছে।
কারা আক্রান্ত?
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দু’জন, বিরোধী নেতা-নেত্রী তিন জন, সাংবিধানিক পদাধিকারী এক জন,সাংবাদিক চল্লিশের বেশি , বহু ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি, নিরাপত্তা সংস্থার বর্তমান ও প্রাক্তন প্রধান, সমাজকর্মী, আমলা, আইনজীবীরা এই স্পাইওয়্যারে আক্রান্ত।
তা হলে আড়ি পাতে কারা?
জবাব মেলেনি এই প্রশ্নের। ২০১৯-এ লোকসভায় প্রশ্ন করা হয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে, মোদী সরকার পেগাসাস ব্যবহার করে কি ? তৎকালীন তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ জানিয়েছিলেন, ‘বেআইনি কোনও নির্দেশ’ দেওয়া হয়নি ফোনে আড়ি পাতার জন্য। তবে মন্ত্রী জানান, নাগরিকদের ব্যক্তিগত পরিসর ও গোপনীয়তার প্রতি দায়বদ্ধ সরকার। নিরাপত্তার স্বার্থে কারও ফোনে আড়ি পাততে হলে নির্দিষ্ট প্রোটোকল মেনে শীর্ষস্তরের অফিসারদের অনুমতি নিতে হয় সরকারি সংস্থাগুলিকে।