স্বামী স্ত্রীর মধ্যে অশান্তির জেরে ‘ফেলে দেওয়া’ হল ৬ মাসের একরত্তি মেয়েকে। আপাতত তাঁকে উদ্ধার করে রাখা হয়েছে দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরের চিত্তরঞ্জন সেবাসদনে। মা ও বাবা তার কোনো খোঁজ নেয়নি। তাই শিশুটির দেখাশুনার দায়িত্বে রয়েছেন শিশুকন্যাটির ঠাকুমা। অবশ্য তিনিও খুব বেশিদিন ছোট্ট নাতনির দেখাশুনার দায়িত্ত্ব নিতে নারাজ। তাই তাকে একটি হোমে রাখার আয়োজন করছে পুলিশ। খবর সংবাদ প্রতিদিনের।
হাসপাতালের শিশু চিকিৎসক ডা. সুদীপ সাহা জানিয়েছেন, শিশুটি এখনো ভীষণ ছোটো, মাত্র ৬ মাস বয়স তার। তাই তাঁকে ‘অবজারভেশন’এ রাখা হয়েছে। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। কিন্তু তারাও কার্যত বাক্যহারা মা, বাবার এমন অমানুষিক কীর্তিতে। পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, শিশুটির মা বাবার বিরুদ্ধে রিজেন্ট পার্ক থানায় সন্তানের প্রতি দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই শিশুটির পরিবার বাস করে দক্ষিণ কলকাতার রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকার দীনেশপল্লিতে। শিশুকন্যাটির মা মাম্পি মণ্ডল ও বাবা মহাদেব ঘড়াই। কয়েক বছর আগে মহাদেব আর মাম্পির বিয়ে হয়। জন্মের পর থেকেই মেয়েকে অবহেলা করতো তার পরিবার। মা ও বাবা কেউ সেইভাবে শিশুকন্যার দিকে নজর দিত না। জানা গিয়েছে একরত্তি শিশুটির মা দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদীপে পরিচারিকার কাজ করে। বাবা পেশায় গাড়ীচালক। এছাড়া স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ছিল দাম্পত্য বিবাদ। তারা একে অপরকে সন্দেহের চোখে দেখত।
বাচ্চা মেয়েকে কে দেখাশুনা করবে তা নিয়ে চলত চূড়ান্ত অশান্তি। শেষ অবধি একদিন ওই মহিলা শিশুকে রেখে দিয়ে চলে যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপে। এরপরেই বুধবার বাচ্চাটির বাবা মেয়েকে দীনেশপল্লির একটি স্কুলের পাশে ফেলে দিয়ে চলে যায়। খবর পৌঁছয় রিজেন্ট পার্ক থানার পুলিশ এর কাছে। তারা ক্ষুধার্ত শিশুটিকে উদ্ধার করে আর দুধের ব্যবস্থা করে। বাসিন্দারা বাচ্চাটিকে চিনতে পারলেও তার বাবাকে যোগাযোগ করতে পারেনি। পুলিশ যোগাযোগ করে বাচ্চাটির ঠাকুমা কাজল ঘড়াইয়ের সঙ্গে। তাঁর কোলেই ৬ মাসের শিশু কন্যাকে তুলে দেওয়া হয়। তাঁর কাছ থেকে শিশুটির মায়ের ফোন নম্বর নিয়ে ফোন করে পুলিশ।
কিন্তু মা কে যোগাযোগ করলে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেয় কাকদ্বীপ থেকে কাজ ছেড়ে কলকাতায় তিনি আসতে পারবেন না। তাই কিছুক্ষণের মধ্যেই শিশুটির ঠাকুরমাকে সঙ্গে নিয়ে শিশুটিকে চিত্তরঞ্জন সেবাসদনে
ভর্তি করে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। এক পুলিশ আধিকারিক জানান, মা ও বাবা থাকেলও তারা শিশুটিকে দেখতে চাইছে না তাই কার্যত শিশুটি ‘অনাথ’, তাই তাকে হোমে পাঠানো ছাড়া আর কোনও রাস্তা নেই। তবে অত ছোট শিশুকে কোন হোমে দেওয়া সম্ভব সেটা মাথায় রেখেই হোম খোঁজা হচ্ছে। চিকিৎসকরা হাসপাতাল থেকে শিশুটিকে ছাড়লেই হোমে পাঠানোর ব্যাবস্থা করা হবে তাকে। আর শিশুটির মা ও বাবার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।