করোনা ভাইরাসের জন্য বাদুড়কে দায়ী করা হলেও এবার বিজ্ঞানীরা করোনার নতুন রূপ ওমিক্রন নিয়ে চমকপ্রদ একটি তথ্য প্রকাশ করেছেন। বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি তাদের একটি নতুন তত্ত্বে বলেছেন যে কোভিডের সুপার-মিউট্যান্ট ওমিক্রন স্ট্রেন, যা বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে, এটি ইঁদুরের (বা ইঁদুরের মতো প্রাণীর দেহ থেকে) থেকে সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে।
ওমিক্রন (Omicron) ভাইরাসের গঠনের স্পাইক প্রোটিনটি ৩২ বার মিউটেশন করেছে।এটি ডেল্টার তুলনায় প্রায় পাঁচগুণ বেশি সংক্রামক। এতদিন বিজ্ঞানীরা বলছিলেন, হয়ত একজন এইডস রোগীর শরীরে মিউটেশন ঘটিয়ে করোনার নতুন প্রজাতি ওমিক্রন তৈরি হয়েছে। কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়ার স্ক্রিপস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ইমিউনোলজিস্ট প্রফেসর ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসেন তত্ত্ব দিয়েছেন যে ওমিক্রন প্রজাতি রূপে রূপান্তরিত হয়ে ওঠা করোনা ভাইরাসটি ইঁদুরের মধ্যে বিবর্তিত হওয়ার সম্ভাবনাই সর্বাধিক।
বিজ্ঞানীরা এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন যে কোনো একজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি কিছু ইঁদুর জাতীয় জীবকে সংক্রমিত করেছে। এরপর সেই ভাইরাস ইঁদুরের মতো প্রাণীর শরীরে আরও বিবর্তন করে এবং বিপজ্জনক রূপ নেয়। তারপর আবারও ইঁদুর থেকে মানুষকে সংক্রমিত করছে এই ভাইরাস। এই প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় ‘রিভার্স জুনোসিস’। সম্প্রতি বিশ্ব বিখ্যাত নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি পেপারেও এই রিভার্স জুনোসিসের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। অর্থাৎ, একটা ব্যাপার যা এর থেকে বোঝা যাচ্ছে, করোনা মানুষের মধ্যে থেকে বিদায় নিক অথবা না নিক, অন্যান্য জীব জগতের প্রাণীদের মধ্যে এটি থেকে যাবে। এবং তা নিজের মত রূপ পরিবর্তন করে আবার পরিস্থিতি অনুকূল পেলেই ‘স্পিল ওভার’ করে মানুষের শরীরে চলে আসবে। যেমন বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানিয়েছিলেন চিনের ইউহানে নোভেল করোনা ভাইরাস এসেছিল বাদুরের শরীর থেকে মানুষের শরীরে। অর্থাৎ এই তত্ত্ব যদি সত্যি হয় অন্যান্য প্রানী এবং মানুষের মধ্যে এই ভাইরাসের আদান প্রদান চলতেই থাকবে।
অতিমারীর চলাকালীন সামনে এসেছিল যে সময়ে সময়ে মানুষ ছাড়াও আরো অন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের শরীরে সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম করোনা ভাইরাস। কুকুর, বিড়াল, বাঘ, সিংহ ইত্যাদি প্রাণী এবং ইঁদুর গোত্রের প্রাণী মিঙ্ককে সংক্রমিত করেছিল করোনা। এবারে ইঁদুর থেকেই আরো মারাত্মক রূপে বিবর্তন ঘটিয়ে মানুষের মধ্যে আবারো ফিরে এলো করোনা ভাইরাস সংক্রমণ। অর্থাৎ ক্রমশ তার থাবা চওড়া করছে করোনা ভাইরাস। এর সঙ্গে তার প্রথম বাহক বাদুর আছে। এমনটাই জানিয়েছেন কিছু ভাইরোলজিস্ট। এই বিষয়টা চিন্তায় ফেলছে সকলকে। এরম যদি চলতে থাকে তাহলে বলা যায় দীর্ঘ সময়ের অতিথি এই করোনা ভাইরাস। হয়ত আমাদের এর সাথে সমঝোতা করেই চলতে হবে।