বয়স সত্তরের কোঠা ছড়িয়েছে। অশক্ত শরীরে বৃদ্ধ থানায় এসেছেন। ছেলের বিরুদ্ধে তার অভিযোগ। কি অভিযোগ, প্রশ্ন করলে জানান উপায় নেই, ছেলে তাকে দেখে না। গত ছয় বছর ধরে যে টাকা দেয় তাতে কোনরকমে এক বেলা খাওয়া জোটে বৃদ্ধর। পাড়া প্রতিবেশীদের পরামর্শে তাই এসেছেন থানায় সাহায্য চাইতে। ছেলে কি করেন জানতে চাইলে বৃদ্ধ জানায় ‘‘স্কুলে পড়ায়’’!
তারকেশ্বর পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। জীবনের দীর্ঘ ৪৫ বছর বাসের কন্ডাকটারি করে তিনি ছেলেকে বড় করেছেন। অর্থাভাব থাকলেও ছেলেকে পড়াশুনা করিয়েছেন অনেক দূর অবধি। ছেলে স্কুল শিক্ষকের চাকরি পেয়েছেন। ছেলে চাকরি পাওয়ার পরই ২০১৪ সালে স্ত্রীকে হারিয়ে এখন নিঃসঙ্গ রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। এখন বাড়িতে থাকেন শ্বাশুড়ি আর তিনি। চুয়াত্বর বছর বয়স হওয়ায় শরীর আর এখন কর্মক্ষম নেই। কাজও করতে পারেন না আর। উপার্জনহীন সেই বাবাকে আর্থিক ভাবে সাহায্য করে না স্কুল শিক্ষক ছেলেও। রবীন্দ্রনাথের কথায়, ‘‘মাস গেলে ছেলে দেয় দেড় হাজার টাকা দেয়। এই টাকায় আমার সুগার, প্রেশার এই সব ওষুধ কিনতেই সব খরচ হয়ে যায়। আর বাকি যেটুকু উচ্ছিষ্ট টাকা পরে থাকে, তাতে এক বেলাই সেই ভাবে খাওয়া জোটে না।’’
রবীন্দ্রনাথের অভিযোগ, ছেলে অনেক ভাবে ঠকানোর চেষ্টা করেছেন তাকে। কাজ বন্ধ করার পর ভেবেছিলেন নিজের বাড়ি বিক্রি করার সেই টাকায় নিজের খরচ চালাবেন। কিন্তু বাড়ী বিক্রী করতে বাধা দেয় ছেলে মানিক ঘোষ। ৩০ লক্ষ টাকা মূল্যের বাড়ি ১০ লক্ষ টাকায় কিনতে ছেলের প্রস্তাব, হাতে টাকা দেবেন না, বাবার নামে fixed deposit করে দেবেন। ছেলে ‘নমিনি’ থাকবেন। তার থেকে সুদ পাবেন, তাই দিয়ে তার বাবা যেন সংসার চালিয়ে নেন। এই প্রস্তাব মানেননি রবীন্দ্রনাথ।
রবীন্দ্র বাবুর ছেলে প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক মানিক ঘোষ স্বীকার করে বলেন, বাবা বাসের কন্ডাক্টারি করেই তাঁকে কষ্ট করে লেখা পড়া শিখিয়েছেন। অর্থাভাবেই কেটেছে ছোটবেলা। মানিক বলছেন, ‘‘আমার ক্ষমতায় বাইরে উনি যা চাইছে, তাই মাসে দু’হাজার টাকার বেশি দিতে পারি না। উনি পুলিশের কাছে গেছেন, যেতেই পারেন, আমার এই বিষয়ে কিছু করার নেই। ছ’জনের সংসার খরচ চালাই, কোথায় পাব?’’
পাড়া প্রতিবেশীরা দাবি অনেক দিন ধরেই টাকা পয়সা নিয়ে বাড়িতে বাবা-ছেলের অশান্তি লেগেই আছে। হয়তো এই বিষয়ে বাবা থানায় ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।