হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই উৎসব উদযাপিত হয়। এই দিন দিদি বা বোনেরা তাদের ভাই বা দাদার হাতে “রাখী” নামে একটি পবিত্র সুতো বেঁধে দেয়- ভাই বা দাদার মঙ্গল কামনায়, এবং দিদি বা বোনকে আজীবন রক্ষা করার শপথ নেয় ভাই বা দাদারা। অতীতে বহুবার নানা উৎসব একসঙ্গে পালন করেছেন ভারতীয়রা। তার মধ্যে অন্যতম হল রাখি বন্ধন উৎসব।
রাখি বন্ধন শুধু যে হিন্দুরাই পালন করে আসছেন তা নয় অতীতে অনেক ক্ষেত্রে যাঁরা হিন্দু নন সেই সমস্ত ভাই-বোনেরাও রাখি বন্ধন উৎসব পালন করেছেন।
রানি কর্ণবতী ও মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের ঘটনা:
ঘটনা ১৫৩৫ সালের। চিরশত্রু মুঘলসম্রাট হুমায়ুনকে একটি রাখি পাঠান চিতোরের রানি কর্ণবতী। গুজরাতের সুলতান বাহাদুর শাহ এই সময় চিতোর আক্রমণ করেছিলেন। তাতে বিধবা রানি অসহায় বোধ করেছিলেন। সেই পরিস্থিতিতেই তিনি রাখি পাঠিয়েছিলেন সম্রাটকে ও সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন।
চিঠি পাওয়ার পর তিনি পুনরায় রানী কর্নাবতীকে একটি চিঠি পাঠান এবং বলেন, “তোমার রাখি আমি পেয়েছি, আমি দ্রুত সাহায্যের জন্য সৈন্য প্রেরণ করছি”। শোনা যায় হুমায়ুন বাংলা জয় ফেলে রেখে রওনা দেন বোনকে বাঁচাতে।
হুমায়ুন সহ উক্ত স্থানে সেনাবাহিনী আসতে ১৫ দিন দেরি করে ফেলে তাই রানীকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি তাঁর। এই অবস্থায় নিজের সম্মান বাঁচাতে ১৩ হাজার পুর-নারীকে নিয়ে জহরব্রত পালন করেন রানি। তবে রাজা বাহাদুর শাহকে কৌশলে হত্যা করে পুনরায় বিক্রমাদিত্য ও উদয় সিং-কে সিংহাসনে বসান মুঘল সম্রাট হুমায়ুন।
আলেকজান্ডার ও পুরুর কাহিনী:
৩২৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডার ভারত আক্রমণ করেছিলেন। এরই সঙ্গে রয়েছে রাখীর একটি কাহিনী। আলেকজান্ডারের স্ত্রী রোজানা রাজা পুরুকে একটি পবিত্র সুতো পাঠিয়েছিলেন। এর পর তিনি পুরু রাজাকে আলেকজান্ডারের ক্ষতি করতে মানা করেছিলেন। হিন্দু রাজা পুরু। তিনি রাখির মাহাত্ম্য বোঝেন ও তাকে সম্মান করেন। তাই রোজানার কথা রাখতে আর সেই পবিত্র সুতোর বন্ধনকে সম্মান দিতে যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি নিজে আলেকজান্ডারকে আঘাত করেননি।