তালিবানি শাসন কতটা ভয়াবহ সে স্মৃতি ফের ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বে। আর এরই মাঝে উঠে এল তালিবানের মহিলা অত্যাচারের এক প্রছন্ন চিত্র। শারীরিক এবং মানসিক ভাবে পুরোদস্তুর মহিলা হওয়া সত্ত্বেও জীবনের প্রথম ভাগ তাঁকে পুরুষের বেশে কাটাতে হয়েছিল। তালিবানের হাত থেকে রক্ষা পেতে এ ছাড়া আর কোনও উপায়ই তাঁর সামনে তখন ছিল না।
পুরো নাম নাদিয়া গুলাম দাস্তগির। সারা বিশ্ব তাঁকে চিনেছিল ২০১০ সালে। নাদিয়া তখন ২৫ বছরের যুবতী।
পুরুষদের বেশে থেকে তো একসময় ভুলতে বসেছিলেন নিজের নারীসত্ত্বাকে। সেই কারণেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে ছিলেন তিনি। ১৯৮৫ সালে কাবুলে জন্ম নাদিয়ার। আফগানিস্তানের একাংশ তখন তালিবানদের রাজত্বে। নারী স্বাধীনতা বলতে তখন কিছুই ছিল না। অশান্ত এক পরিস্থিতি। মেয়ে হয়ে চলা সহজ হবে না জেনে ভোল বদলেছিলেন। ছোট থেকেই তালিবানদের অত্যাচার দেখেই বড় হয়েছেন তিনি। মেয়েদের তুলে নিয়ে যাওয়া থেকে খুন, অঙ্গচ্ছেদ, সবই ঘটেছে ছোট্ট নাদিয়ার সামনেই। ১১ বছর বয়সে যখন বোমের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাঁদের বাড়ি, মৃত্যু হয় ভাইয়ের। এরপরই এই সাহসী সিদ্ধান্ত নেন নাদিয়া। মৃত ভাইয়ের পরিচয়ে কাটান জীবনের একটা বড় সময়।
তালিবানের অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়ার আর কোনও রাস্তা পাননি তিনি। পুরুষের বেশে বাড়ির বাইরে বেরোতেন। কোরান পড়ে, কাবুলের এক মসজিদে কর্মচারী হিসাবে কাজে যোগ দেন। এভাবেই দিনের পর দিন নিজেকে পুরুষ সাজিয়ে টাকা উপার্জন করতেন। সেই রোজগার থেকেই পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতেন। এমনকী সমাজের কাছে ছেলে হওয়ায় ১৬ বছর বয়সে স্কুলেও ভর্তি হতে পেরেছিলেন তিনি। এইভাবে কেটে যায় ১০ বছর। কিন্তু এরপর আর সম্ভব হচ্ছিল না নিজেকে পুরুষ বলে ধরে রাখা। বয়স যত বাড়ছিল, পোশাক ছাপিয়ে নারীসত্তা জানান দিতে শুরু করছিল।
যদিও ২০০৬ সালে আফগানিস্তানের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারি সংস্থার সাহায্যে কাবুল ছেড়ে পালিয়ে যান নাদিয়া। স্পেনে আশ্রয় নেন নাদিয়া। সেখানে বেশ কিছু দিন তাঁর চিকিৎসা চলে। তার পর স্পেনের একটি শরণার্থী শিবিরে থাকতে শুরু করেন। স্পেনে থেকে উচ্চশিক্ষিত হয়েছেন নাদিয়া। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ২০১৬ সালে ‘ব্রিজেস অব পিস’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থাও গড়ে তুলেছেন তিনি।
আরও অনেক ‘নাদিয়া’ এখনও রয়ে গিয়েছেন আফগানিস্তানে, আক্ষেপ নাদিয়ার।