এই গল্প হার মানাবে সিনেমার চিত্রনাট্যকেও! মেয়ে হারিয়ে গিয়েছিল। বলা ভালো তাকে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে কোথাওপাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাঁকে খুঁজতে পুলিশের কাছেও সাহায্য চেয়েছিল মা। কিন্তু কোনো দিক থেকেই কোনো সাহায্য না পেয়েই নিজেই মেয়েকে উদ্ধার করার সিদ্ধান্ত নেন। চক্র ধরে ভারতে আসেন তিনি, অবশেষে মেয়েকে খুঁজতে ভারতের একটি পতিতা পল্লিতে পর্যন্ত পাড়ি দেন তিনি, অবশেষে কীভাবে নিজের মেয়েকে উদ্ধার করেন তিনি? হার না মেনে লড়াই চালিয়ে যান নিজের মেয়েকে বাঁচানোর।
ঘটনা টা কি? জানা গেছে ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা এক তরুণীকে বিউটি পার্লারে কাজ দেওয়ার নাম করে ভারতে পাচার করে দেওয়া হয়। এদিকে মেয়েকে খুঁজতে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ান মা। মিরপুরের পল্লবী থানায় মেয়ের নিখোঁজ হওয়ার ডাইরি করেন। কিন্তু সেইভাবে কোনো সুরাহা হয়না। শেষমেশ মেয়েকে উদ্ধারের কাজ নিজের হাতেই তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। মীরপুরের এক বাসিন্দার এই চক্রটিতে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। তাকে আটক করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস দমনের পুলিশ র্যাব
সূত্রের খবর, পাচারকারীরা ওই মহিলার মেয়েকে জানিয়েছিল, কোনো চিন্তার কারণ নেই। ভারতে গিয়ে তাকে বিউটি পার্লারে কাজের ব্যাবস্থা করে দেওয়া হবে। এরপর তাকে ফাঁদে ফেলে অবৈধভাবে ওই তরুণীকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয় বলে জানা যায়। এরপর তাকে পাচার করে দেওয়া হয় উত্তর দিনাজপুরের এক যৌনপল্লিতে। এদিকে, মেয়ের খোঁজ করতে মা বুঝতে পারেন হদিশ দিতে পারেন ওই পাচারকারীরাই। তাই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ওই তরুণীর মা। নিজেই ভারতে কাজে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। পাচারকারীদের মূল পান্ডা একই ভাবে তার মাকেও ভারতে বিউটি পার্লারে কাজ দেখানোর লোভ দেখায়। এদিকে, মেয়েকে উদ্ধার করার লক্ষে তার মা ভারতে ওই সূত্র ধরে আসতে চেয়ে সেই প্রস্তাবে রাজিও হয়ে যান।
প্রথমেই নারী পাচারকারী চক্রের মাধ্যমে তরুণীর মাকে পাঠানো হয় দিল্লিতে। সেখানে নিজের মেয়ের খোঁজ খবর করে তিনি জানতে পারেন মেয়ে কলকাতায় রয়েছে। এরপর বহু কাঠখড় পুড়িয়ে পৌঁছন মেয়ের কাছে দিনাজপুরের যৌনপল্লীতে। কিন্তু স্থানীয়রা বারন করেন সেখানে মেয়ের কাছে যেতে। বলা হয় তাঁকেও আর যৌনপল্লী থেকে বার করা অত্যন্ত কষ্টকর হবে। তিনি কারো বাঁধা শোনেননি, অবশেষে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের সহায়তায় মেয়েকে উদ্ধার করেন তিনি।
অন্যদিকে, মেয়েকে নিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরার পথে আইনি কাগজপত্র না থাকায় তাঁদের আটক করে ভারতীয় সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী। পরে তারা খবর দেয় বাংলাদেশ বর্ডার বাহিনী -কে। এরপর উভয়পক্ষের পতাকা বৈঠক শেষে মানবিকতার কারণে মা এবং মেয়েকে ঢাকায় ফেরত পাঠানোর ব্যাবস্থা করে দেওয়া হয়। এদিকে, পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে বাংলাদেশের র্যাব ও ভারতের সিআইডি।