ঘরের সব জানলাই হাট করে খোলা। দরজা বন্ধ। হাওয়ায় জানলার পর্দা উড়ছিল। সেই পর্দার ফাঁক দিয়ে আশেপাশের প্রতিবেশীদের চোখ গেছিল ঘরের মেঝেতে। সেই দৃশ্য দেখেই থ হয়ে যান তারা। একটি ঘরের মেঝেতে সত্তর বছর বয়সী মায়ের নিথর দেহ। আর তার পাশের ঘরেই পরে আছে ছেলের দেহ। নাম ধরে অনেক ডাকলেও কেউ সারা দিচ্ছেন না। ভেতর থেকে আটকানো দরজা। কিছু বিপদ ঘটে গেছে আঁচ করে পুলিশ থানায় খবর পাঠান প্রতিবেশীরা। পুলিশ এসে ঘরের দরজা খুলে উদ্ধার করে মা ও ছেলের প্রাণহীন দেহ। ঘটনায় স্বভাবতই চাঞ্চল্য সোনারপুরে কোদলিয়াতে। মৃত মহিলার নাম তপতী পুরকাইত। অপরজন তার ছেলে গৌতম পুরকাইত। বয়স বছর পঁয়তাল্লিশ।
স্থানীয়রা জানান, গৌতম পুরকাইত এটা ওটা অনেক রকম কাজ করেই সংসারের খরচ টানতেন। মা ও স্ত্রী এবং সন্তানকে নিয়ে ছিল তাদের পরিবার। তবে টাকা পয়সার অভাব হোক বা আর অন্য কোনও কারণেই হোক, তাদের পরিবারে সাংসারিক নানা অশান্তি চলত এমনটাই জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা। কখনো কখনো তারাই এসে মিটিয়ে দিত সাংসারিক অশান্তি। কখনও আবার তাদের ব্যক্তিগত পারিবারিক বিষয় ভেবে অশান্তিকে বিশেষ পাত্তা দিতেন না প্রতিবেশীরা।
কয়েকদিন আগেই সন্তানদের নিয়ে বাপের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন গৌতমের স্ত্রী। গত কয়েকদিন যাবত সেখানেই ছিলেন তিনি। গৌতম থাকছিলেন তার মায়ের সাথে। নিজেরাই রান্না করে খাচ্ছিলেন। আশেপাশের বাসিন্দারা জানান মাঝে একবার গৌতম স্ত্রীকে বাপের বাড়ি থেকে আনতে যান। কিন্তু তিনি তখন আসেননি। কিন্তু এই ঘটনার এমন পরিণতি কল্পনা করেননি কেউই।
প্রতিবেশীদের কথায়, মানসিক অবসাদে নাকি ভুগছিলেন গৌতম। স্ত্রী না থাকায় কিছুটা একাকীত্বে দিন কাটছিল তার। তারপর শুক্রবার রাতে গৌতমের স্ত্রীর কান্নাকাটির আওয়াজ কানে যায় তাদের। শুনে ছুটে আসেন তারা। এসে দেখেন দরজা ভেতর থেকে আটকানো। জানলার পর্দার আড়ালে চোখে পরে দুই ঘরের মেঝেতে মা ও ছেলের প্রাণহীন নিথর দেহ।
এই দৃশ্য দেখে সোনারপুর থানায় খবর পাঠান প্রতিবেশীরা। পুলিশ এসে মা ও ছেলের মৃতদেহ উদ্ধার করে। প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে, বিষ খেয়ে মারা গিয়েছেন দুজন। সেক্ষেত্রে গৌতম তার বয়স্ক মা কে বিষ খাইয়ে তারপর নিজে বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন নাকি এই মৃত্যুর পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।