শোকে আচ্ছন্ন নাজরানা আহমেদ নামক এক মহিলা তার এক বছরের ছেলে রেহানের ছোটো ছোট জামা কাপড় গুলো আকড়ে ধরে উত্তরপ্রদেশের আমরোহার কাঞ্চন বাজার এলাকায় তার বাড়ির বারান্দায় বসে আছেন। ছোট শিশুপুত্রের জামাকাপড়গুলো আলিঙ্গন করে, তার মনে একটি চিন্তা বারবার চলে আসছে।
যদি সে গত মঙ্গলবার বিকেলে বাড়ি থেকে বের না হত? অবশ্য, নাজরানা মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য বাইরে গিয়েছিল এবং সেটিও কেবল তার বাচ্চাদের জন্যই। সে তার সন্তানদের একটি নিরাপদ শৈশবের অন্বেষণে বার হয়েছিল, কিন্তু… যদি?
কাছাকাছি বসেছিল নাজরানার দুই বছরের মেয়ে রেহনুমা। সে তখন তার ছোট্ট ভাইয়ের জামাগুলো একটি খাটে ভাঁজ করে রাখছিল। সেই খাট যেখানে কয়েক দিন আগে রেহানকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে তার বাবা নিজেই।
এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর প্রদেশের আমরোহা জেলায়। জানা গেছে এক ব্যক্তি দরিদ্রতা থেকে মুক্তি পেতে তার ১ বছরের ছোট্ট শিশুপুত্রকে তিন লাখ টাকায় বিক্রি করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু ছেলের জন্য ‘ক্রেতা’ পেতে ব্যর্থ হয়ে তার ১ বছরের ছেলেকে গলা টিপে হত্যা করেছে।
প্রতিবেশীদের বর্ননা অনুযায়ী শিশুটির পিতা নওশাদ আহমেদ ভীষণ বদমেজাজি একজন হিংস্র মানুষ। সাথে সাথে দারিদ্রতাও তাকে গ্রাস করেছিল। হিংস্র হয়ে উঠেছিল সে। জানা গেছে সে তার ছেলে রেহানকে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রী করে একটি টেম্পো কিনতে চেয়েছিলেন। সেই মতন তার স্ত্রীর অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে বাচ্চা ছেলেটির জন্যে সে ক্রেতা খুঁজতে বারও হয়েছিল। কিন্তু বাচ্চা বিক্রির জন্য ক্রেতা না পেয়ে ক্রোধের বশবর্তী হয়ে হয়ে সে তার শিশুপুত্রকে গলা টিপে হত্যা করে।
৩৩ বছর বয়সী নওশাদ আহমেদকে বুধবার সন্ধ্যায় পুলিশ গ্রেফতার করে। নাজরানা এবং তার বাবা শামসাদের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে খুনের মামলা করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি বিচারিক হেফাজতে আছেন।
স্থানীয় পুলিশের বর্ণনা অনুযায়ী, রেহানের ময়নাতদন্তের পর তার মৃত্যুর কারণ ‘শ্বাসরোধ’ বলে নিশ্চিত করা গেছে। একজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা সংবাদ সংস্থা ‘দ্য প্রিন্টকে’ জানান, নওশাদ তার অপরাধ স্বীকার করেছেন।
তারা অত্যন্ত দরিদ্র, জানান মান্ডি ধনৌরার স্টেশন হাউস অফিসার জয়বীর সিং। তিনি আরো বলেন “শিশুপুত্রকে বিক্রী নিয়ে নওশাদ এর সাথে তার স্ত্রীর টানাপোড়েন চলছিল। তার রেহান কে বিক্রী করতে চাওয়ার তার স্ত্রীর তীব্র আপত্তি ছিল। তিনি বাচ্চাটি বিক্রি করতে দিতে চাননি।”
পুলিশ আরো জানান “তদন্তের সময় আমরা জানতে পেরেছি সে বচসা ঘিরে তার স্ত্রীকেও আঘাত করেছিল আর এর আগে তার বাবার হাতও ভেঙে ফেলেছিল”।
বাড়িতে ফিরে, নাজরানা সংবাদ সংস্থা ‘দ্য প্রিন্টকে’ রেহানের একমাত্র ছবি দেখায় – একটি প্রতিবেশীর ফোনে তার মৃত্যুর পরে ক্লিক করা একটি ছবি। ছবিতে রেহানকে একটি নীল রঙের জ্যাকেট পরে দেখানো হয়েছে, তার চোখ বন্ধ এবং মুখ একপাশে ঘুরে গেছে। যারা এই মর্মান্তিক ঘটনা সম্পর্কে জানে না তারা সম্ভবত মনে করবে শিশুটি ঘুমিয়ে ছিল।