পনপ্রথা বেআইনি হলেও অনেক জায়গাতেই বিয়ের পর পন নিয়ে চাপ দেওয়া হতে থাকে। শুধুমাত্র স্বামীর পনের দাবী রাখতে না পাড়ায় গৃহবধুকে খুনের চেষ্টা চালানোর অভিযোগ। শশুরবাড়ি থেকে ওই গৃহবধুকে আধপোড়া অবস্থায় উদ্ধার করা হল বুধবার দিন। তবে ওই মর্মান্তিক আধপোড়া অবস্থাতেই গৃহবধূর দাবি, “ভালবেসেছিলাম তো আমি। আর তাই সংসার করতেও চেয়েছিলাম।”
সংবাদ প্রতিদিনে প্রকাশিত হওয়া এক প্রতিবেদনের সূত্র অনুযায়ী পাঁচ বছর আগের শাহজামালের সাথে হালিমা শেখের বিয়ে হয়। হালিমার ক্যানিংয়ের দাঁড়িয়া গ্রামপঞ্চায়েতের রোনিয়ায় বাপেরবাড়ি। গোপালপুর পঞ্চায়েতের ধর্মতলার বাসিন্দা শাহজামাল পেশায় অটোচালর। বিবাহ পরবর্তী জীবনে একটা দিনও সুখের কাটেনি তাদের। হালিমার পরিবারের দাবি, বাপেরবাড়ি থেকে টাকাপয়সা, নানা দামি দামি সামগ্রী নিয়ে আসার জন্য চাপ দিত শাহজামাল। প্রায়ই মারধর করতো হালিমাকে। বিয়ের একবছর হতে না হতেই মা হয়ে যান হালিমা। এক পুত্রসন্তানের জন্মও দেন। প্রত্যেকে এটাই ভেবেছিলেন যে সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে শাহজামাল হয়তো বদলে যাবে। সেই ভাবনাও ভুল প্রমাণিত হয়ে যায়। উল্টে আরও অত্যাচার বাড়তে থাকে হালিমার উপর। মাঝেমধ্যেই বাপেরবাড়িতে চলে যেতেন হালিমা অত্যাচার থেকে বাঁচতে। তবে তাঁকে ফের বুঝিয়ে শুনিয়ে নিজের বাড়ি ফেরতও নিয়ে যেতেন শাহজামাল ।
ইতিমধ্যে দ্বিতীয় সন্তান আসে শাহজামাল এবং হালিমার জীবনে। তাতেও অত্যাচার কমেনি স্বামীর দাবিপূরণ করতে না পারায়। উল্টে তা যত দিন যায় বাড়তে থাকে। সম্প্রতি শাহজামাল স্ত্রীকে বাপের বাড়ি পর্যন্ত যেতে দিত না। তবে হালিমার বাপেরবাড়ির লোকজন বুধবার রাতে জানতে পারেন, তাঁদের মেয়ে অসুস্থ। শাহজামালের বাড়িতে দৌড়ে যান এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে হালিমার বাপেরবাড়ির লোকজন। সেখানে পৌঁছে হালিমার আধপোড়া অবস্থা দেখতে পান। হালিমার শরীর ভেজা ছিল যখন তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষতচিন্হ মাথায় এবং গায়ে। অভিযোগ, প্রথমে তাকে ধারাল অস্ত্রের কোপ মারা হয়। আর তারপর তার গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আগুনে পুড়ে যাওয়ার অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করতে পারেননি হালিমা বাড়ির সামনের পুকুরে ঝাঁপ দেন হালিমা। তাঁকে তাঁর স্বামী ও শাশুড়ি মিলে ওই পকুরেই ডুবিয়ে মারার চেষ্টা করে বলেও অভিযোগ। এরপর হালিমাকে প্রতিবেশীরা উদ্ধার করে বাপেরবাড়িতে খবর দেয়।
স্বামীকে ভালোবাসার কথা ওই আধপোড়া অবস্থাতেও বলে চলেছেন স্বামী। এছাড়া হাজারও মারধর মুখ বুজে সহ্য করতেন দুই সন্তানের মুখ চেয়ে। পাশাপাশি সংসারও করছিলেন তিনি। বর্তমানে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে ভরতি ওই গৃহবধূ। অত্যন্ত আশঙ্কাজনক তাঁর শারীরিক অবস্থা। এই ঘটনার পলাতক অভিযুক্ত স্বামী ও শাশুড়ি । পুলিশ তাদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে ।