ভারতের স্বাধীনতা দিবস হোক অথবা প্রজাতন্ত্র দিবস। পাড়ায় পাড়ায় উৎসবে, আয়োজনে কোনও অভাব থাকে না, চারপাশ মুড়ে যায় ভারতের জাতীয় পতাকায়। সন্মান প্রদর্শিত হয়, সারাদিন ওড়ে তেরঙ্গা। ১৫ই আগস্ট হোক কি ২৬শে জানুয়ারি এমনটাই হয়। কিন্তু তারপর? পরদিনই দেখা যায় যত্রতত্র অবহেলায় পড়ে রয়েছে ভারতের জাতীয় পতাকা। অনেকে আবার মাড়িয়েও চলে যান। আর এই দৃশ্য বড় কষ্ট দেয় হাওড়া জেলার বাালির যুবক প্রিয়রঞ্জন সরকারকে। তাই পথে-ঘাটে, যেখানে-সেখানে পড়ে থাকা জাতীয় পতাকাগুলি সযত্নে সংগ্রহ করে রাখেন তিনি।এখনও পর্যন্ত তাঁর সংগ্রহে রয়েছে পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি কাগজের জাতীয় পতাকা।
প্রিয়রঞ্জন সরকার নিজের এলাকার লোকেদের কাছে মনু নামে পরিচিত। খুব ভাল করে কথা বলতে পারেন না তিনি। বিশেষভাবে সক্ষম এই যুবকের বহু মানুষের কাছ থেকে বিদ্রুপও জুটেছে। ছোটবেলায় হারিয়েছেন বাবা। মা আভা সরকার তাকে অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছেন। তার মায়ের দেওয়া শিক্ষাতেই ব্রতী মনু। ছোটবেলায় দেখেছেন মা আভাদেবীও রাস্তায় পতাকা পড়ে থাকলে তা মাথায় ঠেকিয়ে তুলে রাখতেন। আজও মায়ের সেই কাজকেই করে চলছেন মনু।
নিজের স্থানীয় এলাকা হোক বা আশপাশের পাড়া, স্বাধীনতা দিবস বা প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানের পরের দুদিন যেখানেই জাতীয় পতাকার অবমাননা দেখেন, উদ্ধারে করতে নেমে পড়েন। প্রথমদিকে রাস্তা থেকে কাগজের জাতীয় পতাকা তুলে এনে বাড়ির রান্নাঘরে রাখতেন। কিন্তু দিনে দিনে তার সংগ্রহ করা জাতীয় পতাকার সংখ্যা বাড়ছে তাই এইসব রাখার জন্য ১০ ফুট বাই ১৫ ফুটের একটা ট্যাঙ্ক বানিয়ে নিয়েছেন মনু। এখন সেই ট্যাঙ্কয়ে ন্যাপথালিনের সুরক্ষায় সাজানো থাকে তেরঙ্গা।ধূপ জ্বালিয়ে পুজোও করেন রোজ। সেখানে নাহলেও তার সংগ্রহে আছে ১৪-১৫ হাজার পতাকা।
শুরুর দিকে অনেকেই তাকে কাগজ কুড়ানি ইত্যাদি বলে টিপ্পনী কাটতেন। তবে আস্তে আস্তে অনেকেই তাঁর কাজকে সন্মানের চোখে দেখতে শুরু করেছেন বুঝতে পারছেন। শ্রীরামপুর সহ হাওড়ার বিভিন্ন এলাকায় তার সঙ্গী হয়ে এই কাজে ব্রতী হন আরও চল্লিশ জন যুবক-যুবতী। এখনও অনেকের মধ্যেই সচেতনতার অভাব। তাই মনুর আশা তার এই কাজ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াবে।