Dainik Sangbad – দৈনিক সংবাদ
Image default
FEATURED ট্রেন্ডিং

মর্মান্তিক! ডাল নিয়ে শুরু হয়েছিল স্বামী স্ত্রীর ঝগড়া! বিবাদের কারণে প্রাণ গেল তিন ভাই বোনের

মর্মান্তিক। সামান্য বিষয় নিয়ে শুরু হওয়া বৃদ্ধা বাবা মা হারাল তার তিন ছেলে মেয়ে। দিল্লির শাকুরপুর এলাকায় ডাল পরিবেশন করা নিয়ে গার্হস্থ্য বিরোধের জেরে একজন প্রপার্টি ডিলার নির্বিচারে গুলি চালিয়ে স্ত্রী ও দুই শ্যালক কে হত্যা করেছে। নেতাজি সুভাষ প্লেস থানা পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে এবং অপরাধে ব্যবহৃত লাইসেন্সযুক্ত রিভলভারটি বাজেয়াপ্ত করেছে। রোববার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানায়, ৪৫ বছর বয়সী হিতেন্দ্র যাদব তার স্ত্রী সীমা এবং দুই সন্তান কে নিয়ে শাকুরপুর গ্রামে থাকেন। বড়ছেলে জয় এমবিবিএস-এ ভর্তি হয়েছে, আর ছোটো ছেলে হানি অশোক বিহারে অবস্থিত একটি সুপরিচিত স্কুলে দশম শ্রেণির ছাত্র। পেশায় প্রপার্টি ডিলার হিতেন্দ্রের শাকুরপুর গ্রামে একটি চারতলা বাড়ি রয়েছে, যার চতুর্থ তলায় তিনি পরিবার নিয়ে থাকেন। এই বাড়ির অন্যান্য অংশ এবং গ্রামের অন্যান্য সম্পত্তি থেকে লাখ লাখ টাকা ভাড়া আসে।

সীমার মা চন্দ্রপ্রভা দেবী জানান, ২০০১ সালে হিতেন্দ্রের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে হয়, কিন্তু বিয়ের পর থেকেই দুজনের মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকে। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে একাধিকবার আলোচনাও হয়েছে। সীমার তরফে থানায় অভিযোগ করায় বিষয়টি থানায় পৌঁছায়। তবে প্রতিবারই বোঝাপড়া করে বিষয়টি চাপা পড়ে যায়।

এক সিনিয়র পুলিশ অফিসার জানিয়েছেন, রবিবার হিতেন্দ্র ও সীমার মধ্যে ডাল খাওয়া নিয়ে বিবাদ শুরু হয়। বলা হচ্ছে, হিতেন্দ্র মদ খেয়ে বাড়িতে এসে সীমাকে খাবার পরিবেশন করতে বলেন। তিনি মসুর ডালের স্বাদ পছন্দ করতেন না এবং সীমা মুসুর ডাল খেতে দিলে এই নিয়ে উভয়ের মধ্যে ঝগড়া হয়। বিষয়টি এতটাই বেড়ে যায় যে সীমা তার ভাইদের ঘটনাটি জানিয়ে বাড়িতে ডেকে নেন। পুলিশ অফিসার বলেছিলেন যে তার এক ভাই বিজয় পরিবার সহ গুরুগ্রামে থাকতেন এবং তার অপর ছোট ভাই সুরেন্দ্র মহাবীর ছিটমহলে থাকতেন। খবর পেয়ে বিজয় তার স্ত্রী ববিতা, ভাই, মা চন্দ্রপ্রভা ও শ্যালক চন্দ্রকান্তকে নিয়ে বোনের বাড়িতে পৌঁছান। এ ছাড়া আরও দুটি গাড়িতে থাকা স্বজনরাও প্রায় দশটা পর্যন্ত বাসায় পৌঁছে বাইরে অপেক্ষা করছিল।

বলা হচ্ছে ঝগরা চলাকালীন সীমা তার বাবা-মাকে বহুবার ফোন করেছিল। তা দেখে হিতেন্দ্রও তাঁর বন্ধু ললিতকে ডেকে পাঠান। রাত ১১টার দিকে ললিত পৌঁছলে বিজয় তাকে পরিবারের বাইরের লোক বলে আপত্তি জানায়। এতে হিতেন্দ্র ও তার বড় ছেলে বিজয় কে বহিরাগত বলে কটূক্তি করেন। সীমা তখন জয়কে থাপ্পড় মারে, আর তার ভাই বিজয় তাকে মারধর শুরু করে। ছেলেকে মারধর করতে দেখে হিতেন্দ্র তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে সীমার দুই ভাইই তাকে আক্রমণ করে। এতে হিতেন্দ্র তার শোবার ঘরে গিয়ে আলমারি থেকে রিভলবার বের করে গুলি চালাতে শুরু করেন।

ক্ষুব্ধ হিতেন্দ্র তার শ্যালক বিজয়ের দিকে রিভলবার তাক করলে ববিতা তার স্বামীকে বাঁচাতে হস্তক্ষেপ করেন। প্রথমে হিতেন্দ্র তাকে চলে যেতে বলল, কিন্তু সে রাজি না হলে সে তার পায়ে গুলি করে। এরপর দুই শ্যালকের মাথায় ও বুকে চারটি গুলি করে। অন্যদিকে গুলিবর্ষণ হচ্ছে দেখে ববিতার ভাই চন্দ্রকান্ত নিজেকে একটি ঘরে বন্ধ করে ফেলেন।

দুই শ্যালককে শেষ করে দ্রুত দৌড়ে নেমে পড়েন হিতেন্দ্র। এরপর হঠাৎই তিনি ফিরে এসে স্ত্রী সীমার মাথায় গুলি করেন। এরপর তিনি নিজেকে গুলি করার চেষ্টা করেন, কিন্তু রিভলভারটি খালি থাকায় তার জীবন রক্ষা পায়। এরপর ছেলেরা রিভলভারটি ছিনিয়ে নিয়ে খাটের নিচে ফেলে দেয়। এর পর ললিত পুলিশকে ফোন করে ঘটনার কথা জানান।

পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের ভগবান মহাবীর হাসপাতালে ভর্তি করলেও তিন ভাইবোনই মারা যায়। ববিতার অবস্থা স্থিতিশীল ছিল। বিএসএ হাসপাতালে নিহতদের পোস্টমর্টেম করা হয়েছে।

ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ধীরে ধীরে বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতজনের উপচেপড়া ভিড় শুরু হয়। তিন ভাই-বোনের মরদেহ এখানে পৌঁছালে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।

সামান্য বিষয় নিয়ে শুরু হওয়া বিবাদের পরিণতি এতটাই মারাত্মক ছিল যে উভয় বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসে। দুই বাড়িতে সংসারের দেখাশোনা করার মতো কেউ নেই। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, বিএসএ হাসপাতালের পোস্টমর্টেম হাউসে মৃতদেহ শনাক্ত করার জন্য নিকটাত্মীয়দের খোঁজে সমস্যা দেখা দিয়েছে। নেতাজি সুভাষ প্লেস পুলিশ মৃতের মা ৬৫ বছর বয়সী চন্দ্রপ্রভা দেবীর অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর নথিভুক্ত করে অভিযুক্ত জামাইকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ মৃতদেহগুলো ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে।

Related posts

টিকার দু’টি ডোজ নিলেও পড়তে হবে মাস্ক; ডেল্টা স্ট্রেনের ভয়াবহতায় করোনা নিয়ে বিধি বদল আমেরিকায়

News Desk

খসে গেছিল পুরুষাঙ্গ! পুনরায় প্রতিস্থাপন করে হাতে সেটি বসালো চিকিৎসক! তারপর…

News Desk

নিয়ম না মেনেই সমুদ্রে চোরা স্রোতের শিকার হচ্ছেন পর্যটকরা! ক্রমশঃই দীঘায় বাড়ছে দুর্ঘটনা

News Desk