পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক নিয়োগ কেলেঙ্কারির অভিযুক্ত পার্থ চ্যাটার্জির ঘনিষ্ঠ সহযোগী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে ইডি কঠোর জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এদিকে ইডির অভিযান চলাকালীন অর্পিতার ৪টি গাড়ি নিখোঁজ হয়েছে। ইডি সূত্র বলছে, অর্পিতার এই সমস্ত গাড়ি তার ডায়মন্ড সিটি কমপ্লেক্স থেকে হারিয়ে গেছে। জানিয়ে রাখা যাক যে, অর্পিতার দুটি বাড়ি থেকে ৫০ কোটি নগদ টাকা, ৪ কোটি টাকার সোনা এবং ২০টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও তার ফ্রিজ করা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেও রয়েছে কয়েক কোটি। মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া অর্পিতা গত কয়েক বছর ধরেই বিলাসবহুল জীবনযাপন করছিলেন। বাবার মৃত্যুর বিনিময়ে চাকরি পেলেও সেই চাকরী ছেড়ে দেন। এমনকি স্বামীকেও নাকি ছাড়েন তিনি।
অর্পিতা মুখোপাধ্যায় কলকাতার উত্তর সাব-আরবান এলাকার বেলঘোরিয়ায় একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার একটি বোন আছে যে বিবাহিত। সেই সাথে তার বাবা আর এই পৃথিবীতে নেই। অর্পিতার মা মিনাতি মুখার্জি বেলঘরিয়ায় তার পৈতৃক বাড়িতে থাকেন। অর্পিতার বাবা কেন্দ্রীয় সরকারে চাকরি করতেন। কিন্তু হঠাৎ করেই তিনি মারা যান। এরপর অর্পিতাকে কাজের প্রস্তাব দেওয়া হলেও তিনি তা করতে রাজি হননি।
অর্পিতার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে, ইডি-র জিজ্ঞাসাবাদে সামনে উঠে এসেছে আরো এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গেছে যে অর্পিতা পশ্চিমবঙ্গের ঝাড়গ্রামের এক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করেছিলেন। তবে বিয়ের কয়েক মাস পর অর্পিতা তার স্বামীকে ছেড়ে কলকাতায় চলে আসেন।
আসলে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের স্বপ্ন নাকি ছিল অনেক বড়। চাকরির বদলে মডেলিং ও অভিনয়ের জগতে যেতে চেয়েছিলেন তিনি। এ জন্য কলেজ জীবন থেকেই মডেলিং শুরু করেন অর্পিতা। স্বামীকে ছেড়ে অর্পিতা কলকাতায় আসেন এবং এখানে তিনি বাংলা ছবিতে ছোট ছোট রোল পেতে শুরু করেন।
অর্পিতা ২০০৮ সালের বাংলা ফিল্ম পার্টনারে অভিনয় করে আত্মপ্রকাশ করেন। এই ছবিতে অর্পিতার কাজ দেখে প্রযোজক-পরিচালক অনুপ সেনগুপ্ত তাকে তার পরবর্তী ছবি ‘মামা ভাগনে’ ছবির প্রস্তাব দেন। আসলে, অনুপ সেনগুপ্ত তার মামা ভাগনে (২০১০) ছবিতে নায়িকার বন্ধুর জন্য একটি নতুন মুখ খুঁজছিলেন। এ সময় কেউ একজন তাকে অর্পিতার সাথে দেখা করায়। এরপর তিনি অর্পিতাকে সুযোগ দেন। এই ছবিতে অর্পিতার সঙ্গে ছিলেন বাঙালি অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ও।
বাংলা ছবির পাশাপাশি কিছু ওড়িয়া ছবিতেও কাজ পেয়েছেন অর্পিতা। তবে তাকে শুধুমাত্র পার্শ্ব ভূমিকায় নেওয়া হয়েছে। ২০১১ সালে ‘বাংলা বাঁচাও’ ছবিতেও অভিনয় করেন অর্পিতা। ধীরে ধীরে অর্পিতার নামডাক হতে থাকে।
একজন অভিনেতা হিসেবে অর্পিতার ফিল্ম ক্যারিয়ার ২০০৮ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত প্রায় ৬ বছর স্থায়ী হয়েছিল। এদিকে, ২০১০ সালে, অর্পিতার সাথে পার্থ চ্যাটার্জির দেখা হয়। প্রথমবারের মতো দুজনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন একজন বাঙালি অভিনেত্রী। এরপর প্রায়ই পার্থের সঙ্গে দেখা যেত অর্পিতাকে।
২০১৬ সালে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, যিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন, অর্পিতাকে কলকাতার একটি বড় দুর্গা উৎসব কমিটির তারকা প্রচারক বানিয়েছিলেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায় আগে থেকেই এই কমিটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পার্থের সাথে দেখা করার পর, অর্পিতাও চলচ্চিত্র কমিয়ে দেন কিন্তু পাশাপাশি বিলাসবহুল জীবনযাপনও শুরু করেন।