পারল না বেঙ্গালুরুর চিকিৎসকরা, কিন্তু করে দেখাল এই রাজ্যের চিকিত্সক। সিমেন্টের তৈরী পাঁজর বসিয়ে যুবকের জীবন ফিরিয়ে দিলেন। আপাতত তিনি বিপদমুক্ত।গত তিন-চার বছর ধরে মথুরাপুরের কাঁকনদিঘির বাসিন্দা ২১ বছর বয়সী হারাধন পুরকায়েত নামের এক যুবকের বুকের বাঁ দিকের পাঁজরের কিছুটা জুড়ে ক্রমশ বড় হচ্ছিল একটি টিউমার, আসলে এই টিউমারটি এক ধরনের ক্যান্সার। ভয়াবহ যন্ত্রণায় ভুগছিলেন ২১ বছরের ওই যুবক হারাধন পুরকাইত। ওই টিউমার এতটাই বড় আকারের হয়ে গিয়েছিল যে সেটি ওই যুবকের ফুসফুসের উপর সৃষ্টি করছিল চাপ যার কারণে ওই যুবক ঠিক মতো শ্বাসবায়ুও নিতে পারছিলেন না।
২০১৮ সালে হঠাৎই বুকে ব্যাথা মারাত্বক আকার নিলে গ্রামের এক দালাল ধরে বেঙ্গালুরু পৌঁছয় চিকিৎসার জন্যে হারাধন। আর দক্ষিণের এই শহরে গিয়েই জানতে পারে তার শরীরে বাসা বেঁধেছে ইউইং সারকোমা (Ewing’s Sarcoma) নামের এক বিরল ক্যানসার। কিন্তু চিকিৎসা কি এর? সেই সুরাহা মেলেনি! এই হসপিটাল ওই হসপিটাল দৌড়েও কোনো পথ না পেয়ে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে আবার বেঙ্গালুরু থেকে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন।
গ্রামেই তার কানে আসে কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালের মেডিক্যাল অঙ্কোলজির ডিরেক্টর ডা. পি এন মহাপাত্রর কথা। কলকাতায় এসে দেখান সেখানে। দক্ষিণ কলকাতার সেই বেসরকারি হাসপাতালে অ্যাপোলো র (Apollo Multispeciality Hospitals) ডাক্তাররা দেখা মাত্রই দ্রুত অপারেশন করতে প্রস্তুত করেন একটি মেডিক্যাল টিম।
সেই মেডিকেল টিমে ছিলেন ডা. আদীশ বসু, ডা. তাপস কর, ডা. তমাশিস মুখোপাধ্যায়। ততদিনে টিউমারটা আকার আরও বড় হয়ে উঠেছিল। আটটা কেমোথেরাপির পরও খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। অবশেষে কলকাতার হাসপাতালে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে, টানা নয় ঘন্টা ধরে চলে সেই জটিল অস্ত্রোপচার। টিউমার এর মাংসপিণ্ড বাদ দিতে গিয়ে বুকে করতে হয় একটি গভীর গর্ত।
যার কারণে হৃদপিণ্ডের রক্ষা করে যে আস্তরণ সেটি প্রায় অবলুপ্ত হয়। শুধু তাই নয় বাদ যায় বুকের পাঁজরের ৪ টি হাড়ও। নতুন করে হৃদপিণ্ডকে রক্ষা করতে কৃত্রিম হাড় বানানো হয় প্রোলিন মেস আর বোন সিমেন্ট মিশিয়ে। সিমেন্টের পাঁজর প্রতিস্থাপন করার পর পিঠের পিছন দিক থেকে মাংস নিয়ে এসে তৈরি করা হয় বুকের পেশি।
বিরল অস্ত্রোপচারের সাফল্যের গত ৫ অগাস্ট হারাধনকে সুস্থ করে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়েছে।উল্লেখ্য চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন এটা ক্যান্সার হলেও, আসলে একধরণের টিউমারেরই প্রকারভেদ। যা প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে ১০০, জনের মধ্যে ৭৫ জন রোগীকেই সুস্থ করা সম্ভব।