দুর্গা পূজা বাঙালির প্রানের পুজো। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন উদ্দেশ্যে স্বর্গ দখল করে নেওয়া মহিষাসুরকে বধ করে দেবী শুভ শক্তির জয়ের সূচনা করেন। কিন্তু যে মহিষাসুরকে দেবী বধ করলেন তাকেও কেন পুজো করা হয়। দেবী দুর্গার পাশাপাশি যে দুর্গা পুজোর সময়ে মহিষাসুরকেও বধ করা হয় তা অনেকেই জানলেও কেন দুর্গার সাথে সাথে অসুর মহিষাসুরকে পুজো করা হয় সেই বিষয়ে অনেকেই জানেন না। এর পেছনে লুকিয়ে আছে এক পুরাণের কাহিনী।
হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী কঠিন তপের পর ব্রহ্মার আশীর্বাদ ধন্য মহিষাসুর ভীষণ শক্তিশালী হয়ে স্বর্গলোক আক্রমণ করেন। ইন্দ্র সহ অন্যান্য দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতারিত করে স্বর্গ রাজ্য দখল করে বসে অসুর রাজা। মহিষাসুরের কাছে হেরে স্বর্গ থেকে পালিয়ে ব্রহ্মার কাছে আশ্রয় পার্থনা করলেন দেবতারা। কোনও পুরুষ মহিষাসুরকে সংহার করতে পারবে না, এই আশীর্বাদ স্বয়ং ব্রহ্মাই দিয়েছিলেন তাঁকে। তাই কোনো উপায় না পেয়ে শেষে নারায়ণ ও মহাদেবের স্মরণাপন্ন হন ব্রহ্মা। দেবতাদের শোচনীয় অবস্থার কথা শুনে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব, ইন্দ্র এবং অন্যান্য দেবতাদের শরীর থেকে নির্গত হল অনন্য তেজ। সেই সমবেত তেজ থেকে জন্ম নিলেন এক ভীষণ তেজী কিন্তু পরমা সুন্দরী দেবী। দশভূজা সেই দেবীকে বিবিধ অস্ত্র দান করলেন দেবতারা।
মহিষাসুর মা দুর্গার এই রূপে খুবই মুগ্ধ হলেন। মহিষাসুর মা দুর্গার প্রতি এতটাই মুগ্ধ হলেন যে তাকে বিবাহের প্রস্তাব দিলেন এবং দেবী তা উপেক্ষা স্বরূপ প্রত্যাখ্যান করলেন। প্রচন্ড রেগে গেলেন মহিষাসুর এবং যুদ্ধ শুরু হল মা দুর্গার সাথে। মহিষাসুর নিহত হলেন। তিনবার ফের বেচে ওঠে মহিষাসুর। এই দেবী তিনবারই তাঁকে বিনাশ করেন ত্রিবিধ রূপ ধারণ করে। প্রথমে অষ্টাদশভুজা উগ্রচণ্ডা রূপে বধ করলেন , দ্বিতীয়বার বধ করলেন ভদ্রকালী এবং তৃতীয়বার বধ করলেন দশভুজা দেবী দুর্গা রূপে।
রাত্রিকালে ভদ্রকালী মূর্তি দেখলেন মহিষাসুর স্বপ্নে। তাঁর আরাধনা শুরু করলেন। আরাধনায় তাঁকে বর প্রার্থনা করতে বলেন প্রীত ও প্রসন্ন দেবী। মহিষাসুর জানালেন, ‘ কোনও দুঃখ বা ক্ষোভ আমার নেই আপনার হাতে মৃত্যুর জন্য, কিন্তু আমিও যাতে আপনার সঙ্গে সকলের পূজিত হই সেই আশীর্বাদ করুন। আর কিছু চাওয়ার নেই আমার।’ তখন দেবী ভদ্রকালী আশীর্বাদ করে বললেন, ‘ তুমি সব সময়েই পূজ্য হবে দেবতা, মানুষ ও রাক্ষসদের উগ্রচণ্ডা, ভদ্রকালী আর দুর্গা, এই তিন মূর্তিতে আমার পদলগ্ন হয়ে।’ মহিষাসুরের দেবীর পাদলগ্ন হয়ে পুজো পাওয়ার বিবরণ আর কোথাও নেই এক ‘কালিকাপুরাণ’ ছাড়া।