বইছে কনকনে উত্তরে হাওয়া, শীতের আমেজ, আর শীতকাল মানেই ভোজন রসিক বাঙালির রসনা তৃপ্তি করতে হাজির হয় জয়নগরের মোয়া। নরম, নলেন গুড়ের গন্ধ নিয়ে মন মাতানো এই মোয়া নিয়ে রয়েছে নানা কাহিনী। লোকোশ্রুতি অনুযায়ী জয়নগরের মোয়া আবিষ্কার হয়েছে যার হাত ধরে সেই জামীনি বুড়ো বহড়ু গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।
উনিশ শতকের শেষভাগ। দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার জয়নগর – মজিলপুর অঞ্চলে বহরু গ্রামের জামীনিবুড়োর হাত ধরে আবিষ্কার হল এক পরম সুস্বাদু খাবার। তাঁর নিজের খেতেই চাষ হওয়া কনকচূড় ধান থেকে প্রস্তুত খইয়ের সঙ্গে নলেন গুড় মিশিয়ে মণ্ড প্রস্তুত করে তিনি এক অনুষ্ঠানে পরিবেশন করলেন এমন এক মিষ্টান্ন যা আগে কেউ খায়নি। সেই খাবারের নাম ছড়িয়ে গেল চতুর্দিকে, ধন্য ধন্য করল সবাই। এইভাবেই জন্ম নিল বাঙালির প্রিয় মোয়া।
কালক্রমে সেই মোয়া ব্যাবসা হিসাবে জনপ্রিয়তা পায়। চাহিদাও প্রচুর। তাই ব্যবসায়ীরা ভিত্তিতে মোয়া তৈরীর উদ্দেশ্যে ১৯২৯ সালে পূর্ণ চন্দ্র ঘোষ এবং নিত্য গোপাল সরকার জয়নগরের তাদের তৈরি কারখানা স্থাপন করেন। এই মোয়া তৈরীতে ব্যাবহার হয় কাজুবাদাম কিসমিস পোস্ত। এইভাবে জয়নগরের মোয়া চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং তা জয়নগরের মোয়া নামে প্রসিদ্ধ পায়। পরবর্তী সময় কলকাতা শহরে এই মোয়ার জনপ্রিয়তা প্রবল ভাবে বৃদ্ধি পায়। বাচ্চা থেকে বুড়ো সকলের প্রিয় এই মোয়া। শীতকাল এলেই কনকচূড় ধানের খই আর নলেন গুড়ের তৈরী এই মোয়া এক আলাদা ভালোবাসা পেয়ে আসছে সেই থেকে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন অঞ্চল যেমন নামখানা , কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার, ইত্যাদি এলাকায় হয় কনকচূড় ধানের চাষ। সেই ধানের থেকে প্রস্তুত খই মোয়া তৈরীর কাজে ব্যবহৃত করা হয়। আর শীতকালে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়। সেই রস সংগ্রহ করে জাল দিয়ে তৈরি হয় নলেন গুড়। সেই গুড় খই সাথে মিশিয়ে মণ্ড প্রস্তুত করে, তার সঙ্গে মেশানো হয় খাঁটি গাওয়া ঘি , কাজু ,কিসমিস, পোস্ত দানা ইত্যাদি। এর সাথে কারিগরের হাতের অপূর্ব দক্ষতায় জন্ম নেয় জয় নগরের মোয়া।
জয়নগরে মোয়া ইতিমধ্যে ২০১৫ সালে GI ট্যাগের তকমা পেয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই মোয়ার উৎপত্তি ঘিরে রয়েছে একটি বিতর্ক। জয়নগরে মোয়া বিখ্যাত, না বহড়ু মোয়া বিখ্যাত এই নিয়ে বহু বিতর্ক রয়ে গিয়েছে মানুষের মধ্যে।