সারা পৃথিবীতে সব থেকে প্রলয়ঙ্কর দুর্যোগ বোধহয় যুদ্ধ যেখানে মানুষ নিজেরাই ক্ষমতার লোভে ভয়ঙ্কর ধ্বংসলীলায় মাতে। পৃথিবী একবার নয়, দু’দুবার এরকম দুটো যুদ্ধের সাক্ষী থেকেছে। আমরা যাদের চিনি প্রথম আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নামে। কিন্তু জানেন কি এই প্রলয়ংকারী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল মিকি মাউস (Mickey Mouse)। অবাক হচ্ছেন শুনে! ভাবছেন বিশ্ব বিখ্যাত ওয়াল্ট ডিজনির সৃষ্টি ‘মিকি মাউস’ এর মত শিশুদের প্রিয় একটি কার্টুন চরিত্র কিভাবে একটি ভয়ংকর যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ন অঙ্গ হয়ে উঠতে পারে। পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে প্রতি দিন এখনো কোটি কোটি মানুষ মিকি মাউসের কার্টুন দেখে প্রাণ খুলে হাসে, আর অপার আনন্দে ভাসে৷ মানুষকে অমলিন আনন্দ দিতে যার ভূমিকা সে মানুষকে ধ্বংস করে এমন যুদ্ধে কি করছিল? তাহলে জেনে নিন
সময়টা ১৯৪১ সাল। বিশ্ববাসী তখন প্রত্যক্ষ করছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রলয়ংকরী রূপ। এক সর্বগ্রাসী পরিকল্পনা নিয়ে ইউরোপের দিকে নিজের সৈন্য বাহিনী নিয়ে এগিয়ে আসছেন হিটলার। আমেরিকা তখনও এই যুদ্ধে জড়ায়নি। এর পরেই জাপান পার্ল হারবারে আক্রমণ শানালে তারাও জড়িয়ে পড়ে এই যুদ্ধে। কিন্তু হিটলার কে পরাস্ত করা এত সোজা ছিল না। জাপান, জার্মানি, ইটালির সম্মিলিত শক্তি অক্ষ শক্তি রূপে আস্তে আস্তে গ্রাস করছে ইউরোপ কে। এমন অবস্থায় ইংল্যান্ড, রাশিয়া, আমেরিকার মত মিত্র শক্তির দেশ গুলির কাছে প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে ইউরোপের পশ্চিমে একটি রণাঙ্গন তৈরী করা। এই নিয়ে তেহরানে একটি বৈঠক হয়। যে বৈঠকে গৃহীত হয় এক সিদ্ধান্ত। ঠিক হয় ফ্রান্সের নর্মান্ডি উপকূলে আঘাত হানবে মিত্র শক্তি। ঐ সময়ে রাশিয়া ছাড়া প্রায় পুরো ইউরোপই জার্মান সেনাবাহিনীর দখলে ছিল।
প্রসঙ্গত, এক বছরের প্রস্তুতি শেষে ১৯৪৪ সালের ৬ জুন ফ্রান্সকে জার্মানির কবল থেকে মুক্ত করতে নর্মান্ডি উপকূলে মিত্রবাহিনী অবতরন করে। হাজার হাজার সৈন্য জার্মান সেনা বাহিনীকে হতবাক করে দিয়ে ব্রিটেন, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ আরও ৮টি দেশের সৈন্য, ৭ হাজার বিমান ও নৌতরীতে চেপে করে প্রায় দেড় লাখ সৈন্য নর্মান্ডির পাঁচটি উপকূলে জড়ো হয়। আকাশ ও স্থলপথে চলে নাৎসি বাহিনীর সঙ্গে মিত্রবাহিনীর প্রচণ্ড যুদ্ধ যা বিশ্বের ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ যুদ্ধ। হাজার হাজার সৈনিক এই যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করে। নাৎসি বাহিনীর পক্ষের নিহত সৈনিকের সংখ্যা আনুমানিক ৯ হাজার। এই হঠাৎ আক্রমণের কথা আঁচও করতে পারেনি নাৎসি বাহিনী। ফল স্বরূপ ক্রমশঃ ফ্রান্স তথা ইউরোপের উপর থেকে কর্তৃত্ব হারায় জার্মানি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মোড় ঘোরানো সব চেয়ে বড়ো যুদ্ধ হল এই নর্মান্ডি উপকূল দখলের জন্য যুদ্ধ। আর এই যুদ্ধের কোড নেম কী ছিল জানেন? “মিকি মাউস!” আজ্ঞে হ্যাঁ, ওয়ার্ল্ড ডিজনির সৃষ্ট এই কালজয়ী কার্টুন চরিত্রের নামেই এই যুদ্ধের আলোচনা নাৎসি বাহিনীর থেকে সম্পূর্ন সুরক্ষিত আর গোপন রেখেছিল মিত্র বাহিনী।
হিটলারের বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ডি ডে (D Day) বলে মনে করা হয় নর্মান্ডি উপকূল দখলের জন্য যুদ্ধকে। বলা হয় যুদ্ধে জার্মানদের চুড়ান্ত পরাজয়ের শুরু এখান থেকেই। তাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মোড় ঘুরাতে মিকি মাউস যে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল তা অনস্বীকার্য।