দার্জিলিং জেলার মনোরম শৈলশহর দার্জিলিং চায়ের জন্য বিখ্যাত। এর অসাধারণ প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য এখানে গড়ে উঠেছে পর্যটন শিল্প। দার্জিলিং’ নামটি তিব্বতীয় শব্দ থেকে এসেছে, ‘দোর্জে’ অর্থ বজ্রধ্বনি (মূলত ইন্দ্রের রাজদণ্ড) এবং ‘লিঙ্গ’ একটি জায়গা বা জমি, সুতরাং ‘বজ্রদেশের দেশ’।
দার্জিলিং সংলগ্ন পাহাড় এক সময় সিকিম শাসন করতো। আর শিলিগুড়ি সংলগ্ন তরাই সমতল অঞ্চল নেপাল শাসন করতো। ১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দে হঠাৎ করেই নেপালের গোর্খারা পাহাড় অঞ্চল দখল করার চেষ্টা করলো। নেপালীদের বিজয় যাত্রা রুখতে সিকিম রাজা ব্রিটিশ দের সাহায্য নেয়। ইংরেজরা সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট করেনি৷ সিকিমের রাজাকে ব্রিটিশরা প্রস্তাব দিল, তারা সিকিমকে গোর্খাদের আক্রমণ থেকে রক্ষ করবে৷ বদলে দার্জিলিংকে তাদের উপহার হিসেবে দিতে হবে সিকিমকে৷ তাই হল৷
তারপর ব্রিটিশরা নেপালীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ন হয়। ১৮১৪ খ্রিষ্টাব্দে সংগঠিত ব্রিটিশ-গোর্খা যুদ্ধে গোর্খারা পরাজিত হয়। এর পরের বছর সগৌলি চুক্তি হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী সিকিম রাজ্য থেকে যুদ্ধে অধিকৃত করে নেওয়া মেচী নদী থেকে তিস্তা নদী পর্যন্ত সমস্ত অঞ্চল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কে সমর্পন করতে বাধ্য হয়। ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে তিতালিয়া চুক্তির মাধ্যমে আবার সিকিম কে ফিরিয়ে দেয় ব্রিটিশ আর সিকিমের সার্বভৌমত্ব সুনিশ্চিত করে। ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক প্রতিনিধিদল নেপাল-সিক্কিম অঞ্চলের সীমান্তে তাদের যাত্রাকালে দার্জিলিং অঞ্চলে অবস্থান করার সময় এই স্থানে ব্রিটিশ সৈন্যবাহিনীর স্বাস্থ্য উদ্ধারকেন্দ্র নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেন। আর্থার ক্যাম্পবেল ও রবার্ট নেপিয়ার এই শৈলশহর গঠনে অগ্রণী ভূমিকা নেন।
১৮৩০ সালের আশপাশে শুরু হল দার্জিলিং শহর নির্মাণের কাজ৷ বাকিটা ইতিহাস আর বিপুল ঐতিহ্য৷ ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে দার্জিলিং শহরকে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী রূপে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষনা করা হয়। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ১,২৩৪ বর্গমাইল (৩,২০০ কিমি২) ক্ষেত্রফল এলাকা নিয়ে দার্জিলিং জেলা গঠিত হয়, যা বর্তমানে একই আকারের রয়ে গেছে।
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতার পর দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পং ও তরাই অঞ্চলের কিয়দংশ নিয়ে নির্মিত দার্জিলিং জেলাকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।