কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে দীপাবলি শেষে কার্তিক শুক্লা চতুর্থী থেকে কার্তিক সপ্তমী অবধি চারদিন ধরে ছটপুজো করা হয়। ছট পূজায় কোনও মূর্তি উপাসনার স্থান নেই। এতে ডুবিত এবং উদিত সূর্যকে পূজা করা হয়। সূর্যদেব ও তাঁর স্ত্রী উষার আরাধনার মাধ্য়মে এই পুজো করা হয়ে থাকে। প্রধাণত উত্তরভারত তথা বিহার , ঝাড়খণ্ডে এই পুজোর বিশেষ প্রচলন রয়েছে। এছাড়া ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও এই পুজোর প্রচলন রয়েছে। মধ্যপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও নেপালেও এই পুজো নিয়ম মেনে পালন করা হয়।
বিহার ও ঝাড়খণ্ডের এই উৎসব মূলত সূর্যদেবতার উপাসনা। পৃথিবীর সব শক্তির উৎস এই সূর্য, কিন্তু তিনি একা নন, একই সঙ্গে পূজিত হন সূর্যের দুই স্ত্রী ঊষা ও প্রত্যুষা। কথিত আছে, এই দুই স্ত্রী-ই নাকি সূর্যদেবতার সমস্ত শক্তির উৎস! পুরাণে নারীর ক্ষমতায়নের এমন উল্লেখ, ভাবা যায় বলুন তো! ছটপুজো কিন্তু সূর্য-পত্নীদের এই ক্ষমতারই উদযাপন। প্রথম পূজাটি তাই উৎসর্গ করা হয় সন্ধ্যাবেলা, অর্থাৎ সূর্যদেবতার শেষ রশ্মি প্রত্যূষার উদ্দেশে। পরের পুজোটি উৎসর্গ করা হয় পরদিন ভোরে, সূর্যের প্রথম রশ্মি ঊষার উদ্দেশে। মহাভারতেও রয়েছে ছটপুজোর উল্লেখ। সূর্যপুত্র কর্ণই সূর্যোদয়ের সূর্যের পুজো শুরু করেছিলেন। পুরাণ মতে, ভগবান সূর্যের সর্বোচ্চ ভক্ত ছিলেন।
জানেন কি, দূর্গাপুজোর মতোই ছটের আচার-অনুষ্ঠান চলে চার দিন ধরে! আর সেই পুজো শুরুর আগে বিহারের মানুষজন নিজেরাই পরিষ্কার করে ফেলেন রাস্তাঘাট, যাতে বাড়ি থেকে জলাশয় অবধি যাওয়ার পথে কোনও নোংরা না থাকে। ছটের প্রথম দিনটিকে মূলত বলা হয়, ‘নাহায়-খায়ে’ (স্নান ও খাওয়া)। যে মহিলা ছটের ব্রত উদযাপন করবেন, এ দিন মূলত তাঁর শুদ্ধিকরণ পর্ব। ভোরবেলা স্নান সেরে ভাত, ডাল আর মরসুমি সব্জি খাবেন সেই ব্রতীন (ব্রত উদযাপনকারীকে এই নামেই ডাকা হয়)। সব্জি বলতে মূলত লাউ আর ছোলাশাক। আর ব্রতীনের এঁটো করা সেই খাবারই প্রসাদ হিসেবে গ্রহণ করবেন পরিবারের বাকিরা। সে খাবারে নুনের ব্যবহার নৈব নৈব চ!
তৃতীয় দিনে নিকটবর্তী নদী বা জলাশয়ের ঘাটে গিয়ে অন্যান্য ব্রতীর সাথে অস্তগামী সূর্যকে অর্ঘ্য অর্থাৎ দুধ অর্পণ করা হয়। ব্রতের শেষদিনে পুনরায় ঘাটে গিয়ে উদীয়মান সূর্যকে পবিত্র চিত্তে অর্ঘ্যপ্রদানের পর উপবাসভঙ্গ করে পূজার প্রসাদরূপে বাঁশ নির্মিত পাত্রে সুপ, গুড়, মিষ্টান্ন, ক্ষীর, ঠেকুয়া, ভাতের নাড়ু এবং আখ, কলা, মিষ্টি লেবু প্রভৃতি ফল জনসাধারণকে দেওয়া হয়।