বিয়েতে পণ একটি ঘৃণ্য অপরাধ। আর এর বিরুদ্ধে সাংবিধানিক আইনও রয়েছে আমাদের দেশে। তবুও যেন এই পণ আর পণের কারণে অত্যাচার ও হত্যা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রায়শই হয়ে চলেছে। আর যদি কোনও সরকারি কর্মচারী এই যৌতুক নেন তবে সত্যিই চিন্তার বিষয় হয়েছে দাঁড়ায়। কেরলের এক সরকারি চাকুরে বিয়েতে যৌতুক হিসেবে জমি, সোনাদানা এবং গাড়ি পেয়েছেন কিন্তু তাতেও তিনি খুশি নন। যে গাড়ি পেয়েছেন তিনি যৌতুক হিসেবে তা নিয়ে মাঝে মধ্যেই স্ত্রীকে কটাক্ষ করতেন। দিনের পর দিন এই মানসিক অত্যাচার এতটাই বৃদ্ধি পেলো যে অবশেষে আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন ওই আধিকারিকের স্ত্রী। কেরল প্রশাসন রীতিমতো নড়েচড়ে বসেছে ২০২১ এর এই ঘটনায়। পণপ্রথার বিরুদ্ধে দক্ষিণের এই রাজ্যের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ ২৪ ঘণ্টা অনশন করেছিলেন। আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার গোটা রাজ্যে সাড়া ফেলা দেওয়া এই মামলার রায়দান। অবশ্য অভিযুক্ত সরকারি কর্মীর তার আগে জামিন খারিজ করে হাজতে পাঠানো হয়েছে। তাঁর চাকরিও কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
কেরলের পরিবহণ দপ্তরের পদস্থ আধিকারিক কিরণ কুমারের সঙ্গে ২০২০ সালের মে মাসে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাশাস্ত্রের পড়ুয়া বিস্ময়া ভি নায়ার (Vismaya dowry death) বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিস্ময়ার বাবা ত্রিভিকারমান নায়ার তাঁর বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে ১.২৫ একর জমি, ১০০ ভরি সোনা দিয়েছিলেন। সঙ্গে একটি ১১ লক্ষ টাকা দামের গাড়িও নবদম্পতিকে উপহার দিয়েছিলেন । কিন্তু মোটেও খুশি ছিলেন না গাড়ি নিয়ে পেশায় অ্যাডিশনাল ভেহিক্যালস ইন্সপেক্টর কিরণ কুমার। যা নিয়ে মাঝেমধ্যেই কটাক্ষ করতেন স্ত্রী বিস্ময়াকে। সেই কটাক্ষের মাত্রা এতদূর পৌঁছে গিয়েছিল যে শেষপর্যন্ত ২০২১ সালে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন বিস্ময়া । এরপরই কিরণের দিকে সমস্ত অভিযোগ ওঠে।
কিরনকে তাঁর সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। একাধিক ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। বিস্ময়ার আত্মহত্যার জন্য ৫০০ পাতার চার্জশিটে কিরণকে দায়ী করা হয়। সাথে এও বলা হয় যে , কিরণের ক্রমাগত মানসিক অত্যাচারের জন্যই তাঁর স্ত্রী বিস্ময়া কে এই পথ বেছে নিতে হয়েছিল। তীব্র রোষের সৃষ্টি হয় কেরলে। দক্ষিণ ভারতের এই রাজ্যে যৌতুকবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। ২৪ ঘণ্টা অনশন করেন রাজভবনে রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান। এমনকী, পড়ুয়াদের থেকে আন্ডার টেকিং নিতে বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে। যেখানে পড়ুয়ারা শপথ নেবেন ভবিষ্যতে পণ না নেওয়ার। যদি কোনও পড়ুয়ার বিরুদ্ধে তার পরেও যৌতুক নেওয়ার অভিযোগ ওঠে, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর ডিগ্রি বাতিল করবে।
সোমবার কেরলের আদালত কিরণকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। তাকে হাজতেও পাঠিয়েছে জামিন খারিজ করে। এবার তার জন্য কোন শাস্তি অপেক্ষা করছে সেটাই দেখার। তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ থেকে ২০২২ পর্যন্ত পণের কারণে মৃত্যু হয়েছিল অন্তত ৮৩ জনের। ২০২১ সালে এ ধরনের ১০টি ঘটনা ঘটেছে।