এক কনের মৃত্যু হয়েছে তার বিয়ের আগেই আর সেই কারণেই বালুরঘাট এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পরিবারের থেকেই পাত্র পছন্দ করে বিয়ের ঠিক করেছিল৷ বিয়ের কারণে প্যান্ডেলের কাজের জন্য বাঁশ পোতাও হয়েছিল। বিয়ের উদ্দেশ্যেই বাড়িতে আত্মীয় স্বজন রাও আসছিলো একের পর এক। অনুমান করা হচ্ছে যে এই বিয়ের ঠিক মতো আয়োজন করে উঠতে পারেনি পরিবার থেকে। আর হয়তো এই কারণেই ওই কনে বিয়ের ঠিক দিন দুই আগেই আত্মহত্যা করেছে। এই আত্মহত্যার মতো মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাটে। এই সময় ডিজিটাল -এ খবরটি প্রকাশিত হয়েছে।
পুলিশের থেকে জানা গিয়েছে যে , ওই আত্মঘাতী কনের নাম সরস্বতী কিস্কু (২১)। মৃতা সরস্বতী কিস্কু দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট ব্লকের ডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের একমাইল টাকশালা এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। এখনও পর্যন্ত প্রাথমিক তদন্তে যা জানা গিয়েছে যে বিয়ের ঠিক দিন দুয়েক আগেই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল স্বরস্বতী। এই আদিবাসী মেয়েটি কি কারণে আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নিলো সে ব্যাপারে খতিয়ে দেখছে বালুরঘাট থানার পুলিশ। ময়নাতদন্তের কারণেই বৃহস্পতিবার সকাল বেলায় স্বরস্বতীর মরদেহ পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বালুরঘাট ব্লকের ডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের একমাইল টাকশালা এলাকার বাসিন্দা শ্যামল কিস্কু সরস্বতী কিস্কুর বাবা পেশায় কৃষক। বহুবছর আগেই মৃতার মা মারা গিয়েছেন। বাবা আর মেয়ে মিলে কোনোমতে সংসারের হাল ধরেছিলো। মেয়ে যখন বিবাহেযোগ্য হয় তখন শ্যামল বাবু নিজেই তার বিয়ের ব্যাপারে তোড়জোড় শুরু করে দেন। জেলারই পতিরাম থানার খোরনা এলাকার বাসিন্দা, বিজয় মুর্মু পেশায় কৃষিজীবী, তার সঙ্গে সরস্বতীর বিয়ে ঠিক হয়। বিয়ের দিন স্থির হয়েছিল শুক্রবার। গায়ে হলুদ ছিল তার আত্মহত্যার দিনেই। এতকিছু আয়োজন শুরু হয়ে গেলেও, শ্যামল বাবু তার আর্থিক সংকটের জেরে বুধবার পর্যন্ত বিয়ের সম্পূর্ণ আয়োজন করে উঠতে পারেননি। এরপর স্বরস্বতী আত্মহত্যা করে বুধবার রাতে গলায় দড়ি দিয়ে। এই আত্মহত্যার খবর পেয়ে বালুরঘাট থানার পুলিশ এদিন সকালে ঘটনাস্থলে যায় এবং দেহটি উদ্ধার করে বালুরঘাট জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠায় ময়নাতদন্তের জন্য।
কিন্তু স্বরস্বতী কেন হঠাৎ করেই আত্মঘাতী হল সে ব্যাপারে এখনও ধোয়াশা রয়েছে। প্রতিবেশীদের প্রাথমিক অনুমান পরিবার থেকে , বিয়ের আয়োজনের খরচ এতটাই বেশি যে শ্যামল বাবু তা পুরোপুরি আয়োজন করে উঠতে পারেনি। বিয়ের দিন চলে আসলেও সমস্ত আয়োজন করতেই পারেননি তিনি। ফলে স্বরস্বতী খুবই ভয় পেয়েছিলো যে লোকে কি বলবে। অনিতা কিস্কু সরস্বতীর পিসি বলেন, “গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হয় সরস্বতী টাকা নিয়ে চিন্তা ও লোকলজ্জার ভয়েই ৷” একইভাবে শ্যামলবাবু বলেন, “মেয়ের বিয়ে ছিল শুক্রবার । আজ গায়ে হলুদ ছিল। মেয়ে বিয়ের জন্য খুব চিন্তা করছিল ৷ কোথা থেকে আসবে এত টাকা , বিয়ের আয়োজন কোথা থেকে হবে- এই সবই ভাবছিল। লজ্জায় পড়তে যাতে না হয়, তার জন্য বিয়ের আগেই এমন কাজ করেছে মেয়ে।”