প্রাণীর খাদ্যশৃঙ্খল পিরামিডের নিয়ম বলে পাখি পোকামাকড় এমনকি কেঁচো বা ইত্যাদি সেন্টিপড শ্রেণীর প্রাণী ভক্ষণ করে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের যেন প্রাণীবৈচিত্রের কোনও খামতি নেই। সম্প্রতি ওই মহাদেশের অন্তর্ভুক্ত এক দ্বীপে পাখি কে খেয়ে ফেলতে সক্ষম এমন বিছের হদিস মিলেছে। যা খাদ্যশৃঙ্খল পিরামিডের নিয়মের উল্টো। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের অবস্থিত নরফক দ্বীপের দক্ষিণে ৬ কিলোমিটার দূরে ফিলিপ দ্বীপের এমন ঘটনা সামনে আশায় অবাক হয়ে গিয়েছেন গবেষকরা। প্রসঙ্গত দ্বীপে প্রচুর সামুদ্রিক পেট্রেল পাখির বাস। গবেষকরা জানিয়েছেন, ফিলিপ দ্বীপের পাখী ভক্ষণকারী ওই বিছের বিজ্ঞানসম্মত নাম কর্মোসিফেলাস কয়েনেই। এক একটি এই প্রজাতির বিছের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার বা ১২ ইঞ্চির মতো। কোনো শিকার করার সময় এরা শিকারকে ভয়ানক বিষের মাধ্যমে প্রথমে নিস্তেজ করে দেয়। তার পর সেটিকে ভক্ষণ করে।
আর ফিলিপ দ্বীপের এই বিছে এক এক বছরে প্রায় চার হাজার করে সামুদ্রিক পেট্রেল পাখি খেয়ে ফেলছে। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস-এর গবেষকরা এমনই এক রিসার্চ রিপোর্ট প্রকাশ করলেন। রিসার্চ পেপারটি প্রকাশিত হয়েছে American Naturalist পত্রিকায়।
গবেষকরা তাদের গবেষণা পত্রে জানিয়েছেন, এই বিছেগুলির উপস্থিতি পেট্রেল পাখির বাসার আশেপাশেই বেশি লক্ষ করা গিয়েছে। পেট্রেল পাখির বাচ্চাগুলির গায়ে দংশনের নানা উদাহরণ থেকেও স্পষ্ট, এই পাখিগুলিকেই শিকার করছে ওই বিছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে একটা সময় এই বিছে ফিলিপ দ্বীপ থেকে প্রায় মুছে যেতে বসেছিল। আর সেই কারনেই নিজেদের সুরক্ষা বিছের হাতে বিপন্ন হবে না প্রাকৃতিক সামঞ্জস্য বজায় রেখেই দ্বীপটিকে নিজেদের বাসস্থান বানায় পেট্রেল পাখি।
কিন্তু পেট্রেল পাখির সংখ্যা ফিলিপ দ্বীপে কেন কমছে তা সমীক্ষা করতেই প্রকাশ্যে আসে এই বিছের পাখি শিকার করার ঘটনা। ‘দ্য কনভারসেশন’-এ গবেষকরা জানিয়েছেন, নজর রেখে পেট্রেল পাখির একটি বাচ্চার উপর আক্রমণ চালানো এবং সেটাকে খেয়ে ফেলার ঘটনাও তাঁরা প্রত্যক্ষ করেছেন। প্রকৃতির নিজস্ব খেয়ালে এই বিচিত্র খাদ্যশৃঙ্খল, এ নিয়ে গবেষকদের আর কী-ই বা বলার আছে।
গবেষকরা আরো জানান, এই বিছের খাদ্যতালিকায় রয়েছে ৪৮% স্থান পায় মেরুদণ্ডী প্রাণী, ৫২% স্থান পায় অমেরুদণ্ডী প্রাণী, পেট্রেল পাখির শাবক স্থান পায় ৭.৯%, এছাড়াও আছে গেকো, সাপ, সামুদ্রিক মাছ এবং সামুদ্রিক পাখির বিষ্ঠা।