দিনমজুরি করে চলত সংসার ইশাকের। কিন্তু করোনা মহামারির ফলে দেশে আসে লকডাউন। দেশের লক্ষ লক্ষ শ্রমিক , দিন মজুরের মত কাজ হারায় ইশাক। কিন্তু গল্পের আসল মোড়টা আসে এখানেই।
হতাশায় হেরে যায়নি তিনি। প্রবল অভাব অনটনের সংসার কে ঘিরে ইউটিউবে ভিডিও বানানোর সিদ্ধান্ত নেয় ইশাক। সামান্য পুঁজি হাতিয়ার করে নিজের চ্যানেল শুরু করেন তিনি। আর এতেই আসে সফলতা। ছয় মাসে পাঁচ লক্ষ টাকা ইনকাম করেন ইশাক।
সম্প্রতি ইশাক কে ঘিরে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেই প্রতিবেদনে তিনি কীভাবে দিনমজুরের কাজ হারিয়ে সফল ইউটিউবার হয়ে উঠলেন সেই গল্প তুলে ধরা হয়েছে।
ওড়িশার সম্বলপুর জেলার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ ইশাক মুণ্ডা। গত বছর পর্যন্ত তিনি পেশায় ছিলেন দিনমজুর। কিন্তু লকডাউনে খোয়ান সেই কাজ। স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে নামমাত্র উপার্জনে বেশির ভাগ দিন শুধুমাত্র সামান্য ভাত খেয়েই কাটাতে হত তাদের। সেই সময় বেশীরভাগ সময়টাই কাটত তার এক বন্ধুর মোবাইলে ইউটিউব ভিডিও দেশে। সেই ব্লগ ভিডিও দেখাই তাঁর নেশা হয়ে দাঁড়ায়।
এই ভাবে হঠাৎই একদিন করে নিজের ভিডিও তৈরির কথা ভেবে ফেলেন ইশাক। কিন্তু, ভিডিও রেকর্ডিংয়ের জন্য তো দরকার একটা স্মার্ট ফোন। এরপরই একটি ফোন কেনেন তিনি ৩০০০ টাকা ধার করে । এরপরই সেই ফোনের মাধ্যমেই নিজের এবং তার আশেপাশে দারিদ্রে ভরা রোজকার জীবনযাত্রার কথা তুলে ব্লগ ভিডিও তৈরি করতে শুরু করেন। তার প্রথম ভিডিওর বিষয় বস্তু ছিল তাদের গরিব পরিবারের দু’মুঠো ভাত খাওয়ার দৃশ্য। সেদিন ইশাকের ভাতের পাতে ছিল শুধু ভাত আর একটু সবজি। সেই ভিডিও ভাইরাল হয় ইউটিউবে। এখনও পর্যন্ত সেই ভিডিও-র ভিউ ৫ লক্ষ ছাড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন নিজের বাড়িতে কি খান, কীভাবে জীবন কাটান,এই দারিদ্র্য ভরা জীবনে কেমন আছেন তাঁর প্রতিবেশীরা, এইরকম নিম্ন মধ্যবিত্ত জীবনের নানা চিত্র ধরা থাকত ইশাকের ইউটিউব ভিডিও-য়। খুব সামান্য দিনেই তা অনেক মানুষই দেখতে শুরু করেন তার ভিডিও ,পছন্দও করতে শুরু করেন। বাড়তে থাকে ইশাকের ইউটিউব সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা।
প্রথম ভিডিও ইউটিউবে দেওয়ার তিন মাসের মধ্যেই ৫ লাখ মানুষ দেখেন। শুধু ওই একটি ভিডিও থেকেই বহু টাকা আয় করেন ইশাক।
এরপর থেকেই একের পর এক অনেক ভিডিও বানাতে শুরু করেন ইশাক মুন্ডা। ৩৫ বছরের দিনমজুর ইশাক মুন্ডা এখন জনপ্রিয় ইউটিউবার। তার চ্যানেলের নাম ‘ইশাক মুণ্ডা ইটিং’।