টানা ২ বছর ক্যান্সারের অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করছিল ১৪ বছরের ছেলে। ছোট্ট ছেলেটা ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়তে লড়তে এসে দাঁড়িয়েছিল একদম মৃত্যুর মুখোমুখি। হাড়ের ক্যানসারের (Cancer) চিকিৎসার যা খরচ তা জোগাতে জোগাতে বাবা প্রায় কদর্পশূন্য। এইদিকে প্রতিনিয়ত অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করছিল ছেলে। সন্তানের মৃত্যুযন্ত্রণা আর প্রবল অর্থাভাব এই দুয়ের চাপ আর সহ্য পারছিলেন না বাবা। অবশেষে চরম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন তিনি। মৃত্যুপথযাত্রী ১৪ বছরের উপরে প্রয়োগ করা হল ইউথেনশিয়া বা ইচ্ছামৃত্যুর। তামিলনাড়ুর (Tamil Nadu) সালেম জেলায় ঘটেছে এই ঘটনা। প্রসঙ্গত ভারতের আইন ইচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দেয় না। নিজের মৃত্যুপথযাত্রী ছেলেকে প্রাণঘাতী ইঞ্জেকশন দিয়ে যন্ত্রণার চির সমাপ্তি ঘটানোর উদ্দেশে ছেলেকে মারার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হল ছেলেটির বাবা-সহ এই কাজে সাহায্যকারী তিনজনকে।
এই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে অভিযুক্ত পেরিয়াস্বামী ছেলে ভান্নাথামিজহান গত এক বছর ধরেই ভুগছিল হাড়ের ক্যানসারে। পেরিয়াস্বামী পেশায় দিনমজুর। সময়ের সাথে সাথে তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছিল ছেলেটির কান্সার যন্ত্রণা। প্রতিনিয়ত ছেলেকে চোখের সামনে একটু একটু করে মরতে দেখেও চিকিৎসার জন্য কিছুই ব্যাবস্থা করতে পারছিলেন না স্বামী এবং স্ত্রী। কেমোথেরাপিও দেওয়া হয়। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। এরপরই তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। দ্বারস্থ হন ভেঙ্কটেসান নামের এক ল্যাব কর্মীর। তাঁকে অনুরোধ করেন, ছেলেটিকে এই অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে যেন সাহায্য করেন তিনি।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, ভেঙ্কটেশন নামের ওই ল্যাব কর্মীই প্রভু নামের এক চিকিৎসাকর্মীর কাছে ছেলেটির বাবাকে নিয়ে যান। তার কাতর পার্থনা শুনেই মেনেই প্রভু পেরিয়াস্বামীর বাড়ি গিয়ে তাঁর ছেলেকে ইঞ্জেকশন দেন। অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পেরিয়াস্বামীর ছেলেটি।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে প্রভু নামের ওই স্বাস্থ্য কর্মী প্রাণঘাতী কনকোটিনের তিনটি ইঞ্জেকশনের ডোজ দিয়েছিলেন ওই কিশোরকে। এরপরই ওভারডোজের কারণে মৃত্যু হয় তার। তদন্তে উঠে এসেছে ইনজেকশন দিয়েছে যে প্রভু সে কোনো ডিগ্রিপ্রাপ্ত চিকিত্সক নন। ফার্মাসিতে একটি ডিপ্লোমা রয়েছে তার। সে-ই ছেলেটিকে ওই ইঞ্জেকশন দেয়। পুলিশ ছেলেটির পিতা, স্বাস্থ্য কর্মী প্রভু এবং ল্যাব কর্মী এই তিন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে। কিশোরের মৃত্যুর পরই তার প্রতিবেশীদের মধ্যে কেউ একজন ১০০ নম্বরে ডায়াল করে পুলিসকে জানায়, ছেলেটিকে মেরে ফেলার বিষয়ে। তাঁদের বিরুদ্ধে সংবিধানের ১০৯ ধারায় মৃত্যুর প্ররোচনার দেওয়া এবং ৩০২ ধারায় খুনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মামলা রুজু হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এই ইচ্ছা মৃত্যু বা ‘ইউথেনেশিয়া’ শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ ‘ইউ’ এবং ‘থানাতোস’ থেকে। ‘ইউ’ শব্দের অর্থ সরল এবং ‘থানাতোস’ বোঝায় মৃত্যুকে। সেই হিসেবে ‘ইউথেনেশিয়া’ কথাটির অর্থ সরল মৃত্যু। কোনও ব্যক্তি যার আর বাঁচার আশা নেই কিন্তু অসহনীয় কষ্ট পাচ্ছেন তাকে সেই কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে তাঁকে যন্ত্রণাহীন মৃত্যু দিতে সহায়তা করার পদ্ধতিকে এই নামে ডাকা হয়। সারা পৃথিবীতেই এই নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এর মধ্যেই তামিলনাড়ুর থেকে সামনে এল মর্মস্পর্শী ঘটনা ঘটল।