কানাডার অন্টারিওতে ১৯৮১ সালে জন্ম। সেই খ্যাতনামীর আসল নাম যে করণজিৎ কৌর বোরা, তা ভুলে গিয়েছেন হয়তো অনেকেই। কারণ তিনি এখন এক ডাকেই পরিচিত— সানি লিওনি। মধ্যবিত্ত শিখ পরিবারের মেয়ে এই মুহূর্তে বলিউড মেনস্ট্রিমে প্রতিষ্ঠিত, অ্যাডাল্ট ইন্ডাস্ট্রিতে জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
৯ বছর আগে তিনি পুজা ভট্টের ‘জিসম ২’ ছবির হাত ধরে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন । তবে পরিচিতির শিখরে সলমন খানের ‘বিগ বস’-এর দৌলতে পৌঁছেছিলেন। আজ বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী এবং সঞ্চালক সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু সেই পর্ন-তারকা।
তিনি পর্ন-তারকার ভূমিকা থেকে ধীরে ধীরে অভিনেত্রী হয়ে ওঠেন ‘জিসম টু’-র পর ‘জ্যাকপট’, ‘রাগিনি এমএমএস ২’ ছবিতে অভিনয় করার পর। আর ফিরে তাকাতে হয়নি তার পর । ২০১৭ সালে ‘রইস’ ছবিতে তাঁকে শাহরুখ খানের বিপরীতে একটি গানে নাচ করতেও দেখা যায়।
অতীতের পেশার জন্য কম কটূক্তি শুনতে হয়নি তাঁকে বলিউডে পা দেওয়ার পর। কর্নাটকে একটি অনু়্ষ্ঠানে ডাক পেয়েছিলেন সানি ২০১৭ সালের শেষের দিকে । কিন্তু রক্ষণা বৈদিক যুব সেনা সংগঠন হুমকি দিয়েছিল, সানি যদি অনুষ্ঠান করেন, তা হলে কর্নাটকে গণআত্মহত্যা ঘটবে ।
শুধু তা-ই নয়, দেশবাসী তাঁর পোশাক পরা নিয়েও আক্রমণ করতে ছাড়েনি। সমালোচনার শিকার নেটমাধ্যমে ঘন ঘন হয়েছেন। অনেক সময় নিয়েছে বলিউড তাঁকে ‘অভিনেত্রী’ হিসেবে মেনে নিতে।
তাঁর নামে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল ২০১৫ সালে। অভিযোগ ছিল, তাঁর ওয়েবসাইট ‘সানি লিওনি ডট কম’ ভারতীয় সংস্কৃতিকে ধ্বংস করছে।
পর্ন তারকা সানির পেশা সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন তাঁর ভাই পরিবারের প্রথম সদস্য হিসাবে। তাঁর ছবি ২০০৩ সালে ‘পেন্টহাউজ’ পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছিল, যেখানে তাঁকে ‘পেট অব দ্য ইয়ার’-এর তকমা দেওয়া হয়েছিল।
সেখান থেকেই তাঁর পর্নোগ্রাফিতে অভিনয় করার বিষয়ে জানতে পারেন পরিবারের বাকি সদস্যরা । আগে মেয়ের রোজগারে তাঁর বাবা-মা খুশিই ছিলেন। কিন্তু মাঝেমধ্যে তাঁরা সন্দেহ প্রকাশ করতেন রোজগারের উপায় নিয়ে।
তিনি আগেই জানিয়েছিলেন, ১৬ বছর বয়সেই তিনি টের পেয়েছিলেন যে নারী ও পুরুষ, তিনি উভয়ের প্রতিই আকৃষ্ট। কিন্তু একটু বেশিই পক্ষপাতদুষ্ট পুরুষদের প্রতি!
স্বামী ড্যানিয়েল ওয়েবারের সঙ্গে আলাপ হওয়ার পর তিনিও কাজ শুরু করেন সানির সঙ্গে। তাঁরা নিজেদের সংস্থা তৈরি করেন। কোনও দিন ছেড়ে যাননি সানিকে। অসম্মান করেননি কখনও।
একটি ওয়েব সিরিজ বানানো হয় তাঁর জীবনীচিত্র নিয়ে, ‘করণজিৎ কৌর: দ্য আনটোল্ড স্টোরি অব সানি লিওনি’। সেই ওয়েব সিরিজ সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, ‘‘কিছু অন্ধকার অধ্যায় রয়েছে আমার জীবনে। সেগুলোতে ফিরে যাওয়া খুব সহজ কাজ নয়। আমি যে অধ্যায়গুলো পেরিয়ে এসেছি, সে সব আমার কাছে এখন দুঃস্বপ্নের মতো। মা মারা গেলেন, বাবার ক্যানসার ছিল, কিছুদিনের মধ্যে বাবাও চলে যান। বিয়ে করলাম। টিভি শো শুরু করলাম। সে সব দিন খুব দ্রুত কেটে গিয়েছিল। এমন অনেক স্মৃতি রয়েছে, সে সব আর ফিরে দেখতে চাই না।’’