পৃথিবী থেকে মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার পরেও বেঁচে থাকবে হাফ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের একটা প্রাণি। যতক্ষন না পৃথিবী সম্পূর্ন রূপে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, যতক্ষণ না সূর্য তার উত্তাপ হারিয়ে নিস্তেজ হয়ে নিভে যাচ্ছে, ততক্ষণ পৃথিবীর সব প্রতিকূলতার সন্মুখীন হয়েও বেঁচে থাকবে এই একটি প্রাণী। যদিও প্রানীটির বিশেষত্ব এমন কিছুই না। কিন্তু চেহারা অতি সাধারণ হলেও এর ক্ষমতা অসাধারণ বললেও কম হয়।
যার ব্যাপারে বলা হচ্ছে সেই প্রাণীটির নাম হচ্ছে টার্ডিগ্রেড। সবার আগে জার্মান প্রাণীবিজ্ঞানী জোহান অগাস্ট ১৭৭৩ সালে এ প্রাণীটির খোঁজ করেন। টার্ডিগ্রেড দেখতে বেশ অদ্ভুত ধরনের। এই প্রাণীর শরীরে রয়েছে আটটি পা, তাতে আবার নখওয়ালা থাবা আছে। এদের বাইরে থেকে দেখতে অনেকটাই কোনো এক ধরণের পতঙ্গ লাগলেও তাদের বৈশিষ্ট্য আসলে ‘ওয়ার্ম’ বা কেঁচো-শুঁয়োপোকা জাতীয় প্রাণীর মতই বেশী। একে অনেকে জল ভালুক বা জল শূকর নামেও ডাকেন। এর আকার মাত্র ০.৫ মি.লি. মিটার থেকে সর্বোচ্চ ১ মি.লি. মিটার পর্যন্ত হয়। এই প্রাণীর দেহে ছোট ছোট আটটি পা এবং নিজস্ব পাচনতন্ত্র। আপাত দৃষ্টিতে এই প্রাণীটিকে বেশ সাধারন মনে হচ্ছে তাই না? কিন্তু প্রাণীটির সহ্য ক্ষমতা বিষয়ে জানলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন।
বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন পৃথিবীতে যত রকম মহাজাগতিক প্রলয় আসতে পারে – তার প্রায় সবগুলোই সহ্য করে বেচেঁ থাকার ক্ষমতা আছে এই টার্ডিগ্রেডের। পৃথিবীর একেবারে অন্তিম সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারবে প্রাণি।একটা জল-শূকরের এত ক্ষমতা? ৪০ বছর কোনো খাবার ছাড়াও দিব্যি বাঁচতে পারে এই প্রাণি। ১৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাই হোক -৪৫৭ ডিগ্রি শীতলতা, কোনো কিছুই সমস্যায় ফেলতে পারে না এই টার্ডিগ্রেড কে। গরম জলে ফোটানো হোক বা ডিপ ফ্রিজে ঢুকিয়ে দেওয়া হোক, তার পরেও হেসে খেলে ২০০ বছর বেঁচে থাকবে এই টার্ডিগ্রেড।
যার অর্থ হচ্ছে তারা যতোই চরম পরিবেশে বাস করুক না কেন সেই বিষয়ে কোন গ্রাহ্য করেনা । এর পেছনে রহস্য হচ্ছে যখন পরিবেশ ভীষণ প্রতিকূল পরিস্থিতি ধারন করে তখন তারা যে কাজটা করে তা হলো তারা কিছুকালের জন্য মৃত হয়ে যায় ! শুনতে অবাক হলেও এটা সত্যি।
সেই কারণেই বিজ্ঞানীরা এদের মহাশূন্যে পাঠিয়ে দেখেছে। সেখানেও তীব্র অতি বেগুনী রশ্মির সংস্পর্শে এসেও এরা কিছুদিন বেচেঁ ছিল। আর এ জন্যই এই প্রাণী প্রায় ৫০০ মিলিয়ন বছর ধরে এই পৃথিবীর বুকে টিকে আছে। এর অর্থ এই যে ডাইনোসর থেকেও এরা পৃথিবীর অনেক পুরনো বাসিন্দা। তাই বলাই যায় পৃথিবীতে অন্যান্য প্রাণী না টিকে থাকলেও শেষ পর্যন্ত এই টার্ডিগ্রেড বেচে থাকবে।