প্রাণের ঠিকানা বলতেই যেন কলকাতার নাম সবার আগে উঠে আসে। কলকাতা ভেদাভেদ করেনা, সকলকে নিজের বুকে টেনে নেয়, সে জাতি ধর্ম, জাতপাত, স্ত্রী পুরুষ, আস্তিক নাস্তিক, আমিষাশি নিরামিষাশি, দেশি বিদেশি যাই হোক না কেন। এজন্যই এখানে মন্দির,মসজিদ, গির্জা, গুরদ্বারা একসাথেই প্রার্থনা হয়। এই শহরে দূর্গা পুজোর ভোগ থেকে শুরু করে ঈদের দাওয়াত বড়দিনের কেক সব কিছু নেই হুজুকে থাকে। আপনি এক অন্যরকম মনের শান্তি পাবেন চিনা, বৌদ্ধ, শিখ ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম প্রতিষ্ঠানগুলি পরিদর্শন করলে। তবে জানেন কী, জাপানি বৌদ্ধ মন্দির এই শহরের বুকেই রয়েছে। নিপ্পনজান মায়োহোজি নামে এক জাপানি বৌদ্ধ মঠ রয়েছে কালীঘাট মন্দির থেকে ১২ মিনিট দূরে। জাপানিরা খুব বিশ্বাস করেন যে , শান্তি ও প্রশান্তির জন্য আদর্শ জায়গা এই মঠটি।
এই শ্বেতশুভ্র বুদ্ধমন্দির দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়া ব্রিজের নিচে অবস্থিত। ১৯১৭ সালে বৌদ্ধধর্মের নিপ্পনজান মায়োহোজি ভাগটি চালু হয়। বৌদ্ধ ধর্মের এই ভাগটি প্রবর্তন করে নিচিদাৎসু ফুজি নামের বৌদ্ধ সন্ন্যাসী। তিনি পদ্মসূত্রের রচয়িতা ছিলেন। নিচিদাতসু ফুজি এই মন্দিরের নির্মাণ করেন, যিনি ছিলেন জাপানি সাধু নিচিরেনের যোগ্য শিষ্য। বুদ্ধের বাণী এবং শিক্ষার সংগ্রহ হলো পদ্মসূত্র, যেটা বুদ্ধ তার জীবনের শেষদিকে বলতেন। নিচিরেনের স্বপ্ন ছিল, ভারতবর্ষে এই পদ্মসূত্রের প্রচার করা।
১৯৩১ সালে গুরুর এই স্বপ্ন সফল করতে, নিচিদাতসু কলকাতায় আসেন। ১৯৩৫ সালে মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয়। তৎকালীন এক বিখ্যাত শিল্পপতি যুগল কিশোর বিড়লা জমিটি দান করেছিলেন।
অপূর্ব সুন্দর এই মন্দিরের নকশায় জাপানি সংস্কৃতির প্রভাব স্পষ্ট। মন্দিরে অদম্য শান্তি সব সময় বিরাজ করে। দর্শনার্থীর মন শান্ত হয়ে যায় প্রধান ফটক পেরিয়ে ভিতরে প্রবেশের পর থেকেই। জাপানি ভাষায় লেখা বার্তা মন্দিরে ঢুকতেই চোখে পড়ে, মোটামুটিভাবে যার বাংলা অর্থ ‘পদ্মসূত্রের এই অপরূপ জগতে আমি নিজেকে আত্মসমর্পণ করলাম’।
সকালের প্রার্থনা হয় ভোর ৫টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত। অন্যদিকে সন্ধ্যের প্রার্থনা করা হয়ে থাকে বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যে ৭টা পর্যন্ত। অত্যন্ত ধুমধাম করে পালন করা হয় বুদ্ধ পূর্ণিমার সময় এই মন্দিরে। এই মন্দিরে অবাধ প্রবেশের অনুমতি থাকে বৌদ্ধদের অন্যতম শুভ উত্সবের দিন।