সবথেকে জনপ্রিয় স্ট্রিট ফুড কী ভারতের ? বহু মানুষই এক বাক্যে স্বীকার করবে ফুচকা। বিভিন্ন মশলা, ধনেপাতা দিয়ে, মটর দিয়ে আলু মেখে তা শুকনো ফুচকার মধ্যে দিয়ে টক জল দিয়ে ফুচকা যখন মুখে পরে সে যেন এক স্বর্গ সুখ। বর্তমান সময়ে যদিও ফুচকায় এসেছে নানা রকমভেদ। যেখানে দই ফুচকা, মিষ্টি ফুচকা থেকে চিকেন ফুচকা, চকলেট ফুচকাও কত কি এসেছে। কিন্তু শুধু তাই নয়, জানেন কি আমাদের সবার চেনা এই ফুচকার আছে মত অচেনা নাম? বৈচিত্রে ভরা এই দেশের ফুচকার নামেও আছে বৈচিত্র্য। জেনে নিন আপনার প্রিয় ফুচকাকে নানা প্রদেশে কত কি নামে ডাকা হয়।
পানি পুরি
পানি পুরি ফুচকার সহথেকে প্রচলিত নাম।ফুচকাকে মহারাষ্ট্র, গুজরাত, মধ্য প্রদেশ, কর্ণাটক এমনকী নেপালেও এই নামে ডাকা হয়। তবে নাম এক হলেও অন্যটির থেকে স্বাদে সব পানি পুরিই একবারে আলাদা। মুম্বইতে যেখানে ঝাল ঝাল রাগড়া(মটর) তেঁতুলের মিষ্টি চাটনিতে ডোবানো পানি পুরিতে পাবেন, মধ্যপ্রদেশে আলুসেদ্ধ মাখায় পানি পুরি ঠাসা থাকে। গুজরাতে খেজুর, বোঁদে দেওয়া মিষ্টি চাটনিতে ডোবানো পানিপুরির মধ্যে থাকে আলু ও সেদ্ধ মুগ টুকরো করে কাটা । বেঙ্গালুরুতে পেঁয়াজ কুচি পানি পুরির মধ্যে পাবেন।
ফুচকা
পশ্চিম, মধ্য, দক্ষিণ ভারত যদি মজে থাকে পানি পুরিতে তবে পূর্ব ভারত ফুচকায় মজে রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, অসমের গণ্ডি ছাড়িয়ে ফুচকা বাংলাদেশেরও বড় আদরের ডাক। ফুচকা পানি পুরির থেকে বেশ আলাদা উপকরণ আর স্বাদেও। ফুচকা এখানে স্নান করে মিষ্টি চাটনি নয় টক জলে। বেশ ঝাল ঝাল স্বাদ আলু মাখা, সেদ্ধ ছোলা ভরা ফুচকার। আকারেও কিছুটা বড় পানি পুরির থেকে, কড়া ভাজার জন্য একটু লালচে হয় ফুচকার রঙটাও। বিহার, ঝাড়খণ্ডেও বেশ জনপ্রিয় ফুচকা।
গোল গাপ্পে
জনপ্রিয়তায় গোল গাপ্পে ফুচকা, পানি পুরির পরই রয়েছে। উত্তর ভারতে মূলত এই নামে ডাকা হয় হরিয়ানায় ফুচকাকে। মহারাষ্ট্রের বড়া পাওয়ের মতোই উত্তর ভারতে আকাশছোঁয়া গোল গাপ্পের জনপ্রিয়তা। গোলগাপ্পে স্টলের সারি প্রতিটা ফুটপাথের ধার ধরেই থাকে। টক জলে মিশে মাখামাখি আলু, মটর ভরা গোল গাপ্পে মিষ্টি চাটনি,। জলে বিশেষ কিছু মশলা ও হালকা পুদিনার সমাহার থাকে। তবে নাম গোল গাপ্পে হলেও কিন্তু একটু লম্বাটে ধরণের দেখতে। হরিয়ানার গোল গাপ্পের পাশাপাশি ফুচকাকে পানি কে পতাশেও বলা হয় কোথাও কোথাও। যদিও পানি কে পতাশে স্বাদে প্রায় গোল গাপ্পের কাছাকাছি।
পকোড়ি
ফুচকা পকোড়ি নামে পরিচিত গুজরাতের প্রত্যন্ত কিছু অঞ্চলে। তবে পকোড়ির কোনও মিল নেই পকোড়ার সঙ্গে। স্বাদ মোটামুটি এক থাকলেও পকোড়িতে ঝুরি ভাজা দেওয়া হয়। মিষ্টি চাটনির বদলে পুদিনা, কাঁচালঙ্কা কুচির টক-ঝাল জলে পানি পুরির থেকে বেশ আলাদা পকোড়ি। অনেক জায়গায় পকোড়িতে পেঁয়াজ কুচিও দেওয়া হয়।
পতাশি বা পানি কে বাতাশে
রাজস্থানে বেশ জনপ্রিয় পতাশির প্রায় পানি পুরির মতো স্বাদ। তবে পতাশির জলে আম থাকে। উত্তর প্রদেশে ফুচকাকে পানি কে বাতাশে নামে ডাকা হয়। আলু, ছোলা, মটর ভরা বাতাশে বেশ মশলাদার জলে ডোবানো হয়। লক্ষ্ণৌতে ৫টি আলাদা স্বাদের জলে বানানো ফুচকাকে পাঁচ স্বাদ কে বাতাশে বলে। এই বাতাশে হজরতগঞ্জে বিখ্যাত।
গুপ চুপ
ফুচকাকে ওড়িশা, ঝাড়খণ্ডের দক্ষিণ, ছত্তিসগড়, হায়দরাবাদ ও তেলেঙ্গানায় এই মজার নামে ডাকা হয়। তবে গুপ চুপে আলু থাকে না। ছোলা বা মটর সেদ্ধ ভরা গুপচুপে মাঝে মাঝে পেঁয়াজ কুচি পেতে পারেন।
ফুলকি
গুজরাতে রুটিকে চাপাটি বা ফুলকা বললেও, উত্তর প্রদেশে ও নেপালের বেশ কিছু জায়গায় কিন্তু ফুলকি আসলে ফুচকা। রমজান মাসে দহি ফুলকি পাওয়া যায়। দহি ফুলকি মটর দিয়ে দই বড়া দিয়ে বানানো হয়। তবে বিশেষ প্রচলিত নয় ফুলকি।
টিক্কি
ফুচকাকে একমাত্র হায়দরাবাদ ও মধ্যপ্রদেশেই টিক্কি নামে ডাকা হয়। বাকি সব জায়গায় আলু টিক্কি বোঝালেও টিক্কি বলতে এখানে মটর আলু ভরা টকজলে ডোবানো ফুচকাই টিক্কি।
পড়াকা
উত্তর প্রদেশ, আলিগড়ে অনেক জায়গায় পড়াকাও বলা হয়ে থাকে ফুচকাকে।
