‘টিকা মজুত নেই (Corona Vaccine Crisis) আপনাদের ভাঁড়ারে । তাও রিং টোনে টিকাবার্তা বাজিয়ে যান অনবরত । মানুষকে সচেতন করার এই পদ্ধতি বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
বৃহস্পতিবার এভাবেই দিল্লি হাইকোর্ট (Delhi Highcourt) কেন্দ্রের উদ্যোগকে কটাক্ষ করল । আদালতের মন্তব্য,’ মানুষকে আপনারা বলছেন টিকা লাগান, অথচ টিকাকরণ করছেন না। যেখানে ভ্যাকসিন মজুতই নেই কোথাও কে টিকা দেবে?’ বিচারপতি বিপিন সাংঘি এবং বিচারপতি রেখা পাল্লির একটি বেঞ্চ বলে, “যখনই ফোন করা হচ্ছে আপনারা বিরক্তিকর মেসেজ শুনিয়ে চলেছে কেজানে কতক্ষণ ধরে। অথচ টিকা দিচ্ছেন না। টিকা না থাকলে লোকে নেবে কী করে!”
আদালত কেন্দ্রকে তীব্র তিরস্কার করে এদিন বলে, টাকা নিক প্রয়োজনে, তবুও সকলকে টিকা দিক কেন্দ্র।
উল্লেখ্য, দেশব্যাপী গণটিকাকরণ চালু হয়েছে ১৬ জানুয়ারি থেকে । কিন্তু মানুষ টিকা নিতে সক্ষম হয়েছে এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৮ কোটি । তাও প্রথম ডোজ।
দ্বিতীয় ডোজ পেয়ে টিকাকরণ সম্পূর্ণ করেছেন মাত্র ৪ কোটি এই ১৮ কোটির মধ্যে । অর্থাৎ ভারতের মোট জনসংখ্যার ১০% মানুষেরও সম্পূর্ণ টিকাকরণ হয়নি ৫ মাস কেটে গেলেও । কেন? চিকিৎসকরা এই প্রশ্নের জবাবে বলছেন, এর মূল কারণ টিকার অপ্রতুল সরবারহ এবং চাহিদার সঙ্গে জোগানের তারতম্যই ।
দেশজুড়ে ভয়ঙ্কর অক্সিজেন সংকট ও স্বাস্থ্য পরিষেবার বেহাল দশা গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মত অবস্থা হয়ে আছে , সব মিলিয়ে ঘোর টালমাটাল অবস্থায় কেন্দ্র। তার ওপর দিল্লি হাইকোর্টের এই জোরালো কটাক্ষ,মোদি সরকারের অস্বস্থি কয়েক গুণ বাড়িয়েছে ।
এদিকে বৃহস্পতিবারই কোভ্যাক্সিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করার অনুমোদন দেয় কেন্দ্র, ২ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের উপর । কোভিশিল্ডের দুটি টিকার ব্যবধানও আবার বাড়ানো হয় ।
নতুন নিয়মে একটি ডোজ নেওয়ার ৩ থেকে ৪ মাস পরে দ্বিতীয় ডোজটি নিতে হবে । যদিও পুরোনো ব্যবধানই বজায় থাকছে কোভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে অর্থাৎ দুটি ডোজের ব্যবধান থাকছে ৬ সপ্তাহ।
এর পরেই প্রশ্ন উঠেছে, যে টিকার আকাল দেখা দিয়েছে জোগানের অভাবে , তা সামলানোর জন্যই কী ডোজের ব্যবধান পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে? যদিও সেই বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি কেন্দ্রের তরফে।
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহেই সুপ্রিম কোর্ট একটি মামলার শুনানিতে কার্যকারীভাবে করোনার তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলার জন্য কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলিকে অবিলম্বে প্রস্তুতি শুরুর নির্দেশ দেয় ।
সেইসঙ্গে শিশুদের টিকাকরণ শেষের নির্দেশ দেওয়া হয় তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার আগেই । বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি এমআর শাহের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, প্রস্তুতি যদি এখন থেকেই সেরে রাখা হয়, তাহলে হয়তো তৃতীয় ঢেউয়ের মোকাবিলা করা যাবে।
আর সেটার জন্য টিকাকরণ করতে হবে বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনার মাধ্যমে । এই পরিস্থিতিতে এই পর্যবেক্ষণ দিল্লি হাইকোর্টের অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল।