মাকে জীবিত অবস্থায় প্লাস্টিকে মুড়িয়ে প্রবল বৃষ্টিপাত চলার সময়ই রাস্তায় ফেলে দিয়ে গেল মেয়ে! পুলিশ এসে উদ্ধার করলেও অসহায় বৃদ্ধা কে বাঁচানো গেল না। মৃত্যু হল তার। এমনই অমানবিক ঘটনার সাক্ষী রইলো দমদমের সিঁথি থানা এলাকা। অভিযোগ, প্রবল বর্ষণের রাতে অশীতিপর এক বৃদ্ধ মহিলা কে তাঁর সন্তান সিঁথির মোড় কাছে মেট্রো বাইপাসে ফেলে পালিয়ে যায় । জানা গিয়েছে, গতকাল সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে সাতটা নাগাদ এই ব্যাপারটি প্রথমে স্থানীয়দের নজরে আসে। সিঁথির মোড় সংলগ্ন কে মেট্রো বাইপাস বলে জায়গাটি আছে সেখান দিয়ে যান বাহন চলাচল প্রায় নেই বললেই চলে। তার উপর মঙ্গলবারের রাত ছিল দুর্যোগপূর্ণ রাত। হঠাৎই ওই নির্জন এলাকায় স্থানীয়দের কানে আসে এক বৃদ্ধার গলার আর্তনাদ। স্বাভাবিকভাবেই কৌতুহলে এলাকার বাসিন্দারা খোঁজ করেন কোথা থেকে আসছে এমন আওয়াজ। তারাই দেখতে পান ওই বৃদ্ধা কে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এই দিন এক দুর্বল, অসুস্থ বৃদ্ধাকে বাইপাসের কাছে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাঁর মাথা থেকে পা ছিল প্লাস্টিকের মোড়কে মোড়া। ঐখানে এক বাঁশের মাচার পাশে পড়ে ছিলেন তিনি। এদিকে বুধবার সারাদিন হয়েছে প্রবল বর্ষণ ওই অঞ্চলে। আর সেই প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই অসহায় ভাবে পড়ে ছিলেন বছর আশির ওই বৃদ্ধা মানুষটি। প্রথমে স্থানীয়রা তাঁকে ভেবেছিলেন মৃত। পরে প্লাস্টিকের ভেতরে নড়া চড়া দেখে তাঁকে বের করে আনা হয়।
বৃদ্ধাকে দেখেই খবর দেওয়া হয় নিকটবর্তী সিঁথি থানায়। সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ এবং ওই বৃদ্ধাকে পুলিশি তৎপরতায় উদ্ধার করা হয়। তাঁকে জিজ্ঞেস করে পুলিশ জানতে পারে, বৃদ্ধার নাম ঠাকুরদাসী সাহা। পুলিশ জানায়, এমন ভাবে সন্তান ফেলে দিয়ে যাওয়ায় মানসিকভাবে আঘাত পাওয়ার কারণে প্রথমদিকে বৃদ্ধা কিছু কথা বলতে পারছিলেন না। পরে অবশ্য অল্প অল্প কথা বলেন তিনি। পুলিশ কে জানান, তার বাড়ি চিৎপুর অঞ্চলে। বৃদ্ধার মেয়ে দু’জন ব্যাক্তিকে টাকা দিয়ে তাকে ওই এলাকায় তাঁকে ফেলে দিতে বলেছিল। সেইমতো তাঁকে রিকশায় তুলে ওই স্থানে ফেলে দিয়ে আসে দুই যুবক, দাবি করেন বৃদ্ধা। এরপর পুলিশ এবং স্থানীয় মানুষের সহযোগিতায় ওই মুমূর্ষ বৃদ্ধাকে চিকিৎসার জন্য আরজিকর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
যদিও পুলিশ তার মেয়ের খোঁজ করে এবং চিকিৎসার পর তাঁকে আবারও তার বাড়িতে সন্তানের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে আসে। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। শেষ অবধি বৃহস্পতিবার প্রাণ হারিয়ে ফেললেন ওই বৃদ্ধা। এখনও অবধি স্থানীয় সূত্রে পাওয়া খবর থেকে জানা গিয়েছে, মেয়ের কাছে পাইক পাড়ায় বাস করতেন ওই বৃদ্ধা। এবং তার উপর মানসিক এবং শারীরিক অত্যাচার চালাতো তার নিজের মেয়ে ও পরিবার। স্বাভাবিকভাবেই এই চূড়ান্ত অমানবিক এবং নিষ্ঠুর এই ঘটনায় স্তম্ভিত শহরবাসী।