স্বামী মারা যাওয়ার পর তাঁর চাকরিটা পেয়েছিলেন স্ত্রী। কথা দিয়েছিলেন, শাশুড়ির দায়িত্ব নেবেন। কিন্তু চাকরির পর ছোট্ট সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যান পুত্রবধূ, শাশুড়িকে একলা ফেলে। অথৈ জলে পড়েছিলেন বৃদ্ধা। বউমার ফেরার অপেক্ষায় বছরের পর বছর থাকতে থাকতে একদিন হতোদ্যম হয়ে শেষমেশ আদালতের দ্বারস্থ হন। কলকাতা হাই কোর্টে (Calcutta HC) তিনি বউমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার শুনানিতে মঙ্গলবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় পুত্রবধূকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিলেন। ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার এক অফিসারকে দায়িত্ব দিলেন তিনি। ওই পুলিশ অফিসারই সংশ্লিষ্ট মহিলাকে আদালতে সশরীরে হাজির করাবে।
ঘটনার সূত্রপাত ২০১৪ সালে। প্রয়াত হন পশ্চিম মেদিনীপুরের (West Midnapore) প্রাথমিক শিক্ষক বজ্রদুলাল মণ্ডলের। পরিবারে ছিলেন মা, স্ত্রী এবং এক শিশুপুত্র। পরে স্বামীর চাকরি অর্থাৎ প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকার চাকরি পান বজ্রদুলালবাবুর স্ত্রী কৃষ্ণা পাত্র মণ্ডল। চাকরিতে যোগদানের সময় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্কুল পরিদর্শককে (DI) হলফনামা দিয়ে কৃষ্ণাদেবী জানান, বৃ্দ্ধা শাশুড়ির দেখভাল করা থেকে বজ্রদুলালের পরিবারের সমস্ত দায়িত্ব তিনি নেবেন।
কিন্তু বাস্তবে ঘটল উল্টোটাই। স্কুলশিক্ষিকার (School Teacher) চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর কৃষ্ণাদেবী শ্বশুরবাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে। নিজের দেওয়ার কথা অনুযায়ী শাশুড়ির দায়িত্ব নিতেও অস্বীকার করেন তিনি। বউমার জন্য তিন বছর অপেক্ষা করার পর ২০১৭ সালে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন বৃদ্ধা দুর্গাবালা মণ্ডল। উচ্চ আদালত নির্দেশ দেয়, কৃষ্ণাদেবীর বেতনের একটি নির্দিষ্ট অংশ বৃদ্ধাকে দিতে হবে।
দুর্গাবালা মণ্ডলের আইনজীবী শৈবাল কুমার আচার্য এবং অনিন্দ্য ভট্টাচার্য জানান, প্রথম একমাস ৭০০০ টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর আর কোনও টাকা দেননি কৃষ্ণা। বাধ্য হয়েই আদালতের দ্বারস্থ হন শাশুড়ি। মামলাটি উঠেছিল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। মঙ্গলবারের শুনানিতে তাঁকে সশরীরে হাই কোর্টে হাজিরার নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। পাশাপাশি, আইসির মাধ্যমে সবং থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়, কৃষ্ণাদেবীকে আদালতে হাজির হয়।